জীবনবাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করতে যারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাদেরকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান (মুক্তিযোদ্ধা) হিসেবে মূল্যয়ন করা হয়। কিন্তু এখনও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি তাদেরই একজন ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর মনির উদ্দিন জোয়ার্দার।মনির উদ্দিন ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের মৃত গোলাম আলী জোয়ার্দারের ছেলে।স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও সম্মান না পাওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দীর্ঘদিন ধরে অনেক চেষ্টা তদবির করেও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ হয়নি। তালিকায় অর্ন্তভুক্তি না হওয়ায় তিনি বঞ্চিত রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে।
মনির উদ্দিন জোয়ার্দারের বয়স এখন ৮৭ বছর। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ছিলেন ৩৫ বছরের যুবক। ১৯৭১ সালে এই যুবক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বাধীনতার যুদ্ধে। তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।মনির উদ্দিন জানান, মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার আব্দার রহমান স্থানীয়ভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দেন। পরে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাকে একটি ৩০৩ রাইফেল দেওয়া হয়। ১০ নভেম্বর আলমডাঙ্গা উপজেলায় পাকিস্তানি সেনারা ঢুকেছে খবর পান তারা। ঘরে স্ত্রী, ছোট এক ছেলে রেখে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান মনির উদ্দিন। পরে ওই উপজেলার জামজামি এলাকায় তারা শেল্টার নেন।সেখান থেকে ৩০ জনের একটি দল আলমডাঙ্গার আড়পাড়া মাঠে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ করে। সেখানে পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে দুজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ওই যুদ্ধে তাদের দুজন সহযোদ্ধাও নিহত হন।
এ ছাড়া ৬ ডিসেম্বর হরিণাকুণ্ডু থানা আক্রমণেও তিনি অংশ নেন। যুদ্ধ শেষে অস্ত্র জমা দিয়ে জেনারেল এমএজি ওসমানীর কাছ থেকে সনদপত্রও পেয়েছেন। তবে গেজেটভুক্ত হয়নি তার নাম। গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য জামুকাসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদনও করেছেন তিনি। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে যাচাইয়ে তার নামও এসেছিল। তবে স্বীকৃতি পাননি তিনি।এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মহিউদ্দিন আহম্মেদ জানান, মনির উদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আমার সঙ্গে আড়পাড়া যুদ্ধ, থানা আক্রমণসহ কয়েকটি খণ্ড যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। আমি নিজেও তার জন্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু তার নাম গেজেটভুক্ত হয়নি। গেজেটে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়াটা দুঃখজনক।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।