• রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন

ফেসবুকে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করায় পাংশায় প্রভাষককে শোকজ; সমালোচনার ঝড়

মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন
মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন / ৩৪২
শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

মো: আকাশ মাহমুদ:
ফেসবুকে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করায় রাজবাড়ীর পাংশায় এক প্রভাষককে শোকজ করেছে পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। গত ২৭ মার্চ ওই প্রভাষককে পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হয়।

ওই প্রভাষকের নাম শামীমা আক্তার মিনু। সে পাংশা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক।

ফেসবুকে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করায় প্রভাষককে শোকজের ঘটনায় সমালচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহ বিভিন্ন স্থানে।

মাসুদ রেজা শিশির তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন ব্যাক্তিগত অভিমত নাকি আপত্তিকর পোস্ট, স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীন মতামত প্রকাশ করায় শোকজ, ব্যাক্তিগত মত প্রকাশ করায় শোকজ বিষয়টি দুঃখ জনক।

রতন মাহমুদ তার ফেসবুকে পোষ্ট করেছে পাংশা সরকারি কলেজের প্রভাষক শামীম আরা মিনুকে শোকজ করা হয়েছে। তার পোষ্টে ফ্রাস প্রবাসী আশরাফুল ইসলাম কমেন্ট করেছেন তিনি উচিৎ ও বাস্তব সত‍্য কথা তুলে ধরেছেন। একারণে অনেকের গা জ্বালা শুরু।

মোঃ সজিব রাজা লিখেছেন স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও আমি স্বাধীনতা কে খুঁজছি!!

মোঃ নিজাম উদ্দিন লিখেছেন, প্রভাষক হয়তো জানে না সত‍্য বলা মহাবিপদ। আগে মানুষ মিথ‍্যা বলতো না পাপ হবে বলে, এখন সত‍্য বলে না বিপদ হবে বলে।

মঞ্জুর হোসেন লিখেছেন ম‍্যাডামতো ঠিক কথাই বলেছেন। আমি ফরিদপুর থেকে বলছি। দীর্ঘদিন আমি পাংশাতে বসবাস করে এসেছি। যেভাবে অনুষ্ঠান হয় তাতে করে ঠিক পোষ্ট দিয়েছেন।

শহিদ দিয়ানত হোসেন ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মিয়া জাহাঙ্গীর লিখেছেন প্রভাষক শামীমা মিনু তার পর্যবেক্ষণ মূলক একটি মতামত প্রকাশ করেছেন। মতামত প্রকাশ করা একজন নাগরিকের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। তার মতামতের বিরুদ্ধেও ভিন্ন মতামত থাকতে পারে, তারা তা প্রকাশ করুক। তাই বলে আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতা দেখিয়ে নোটিশ প্রধান এটা মনে হয় একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। এরকম শত শত মন্তব্য সরব হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এর বাইরেও চলছে সমালোচনার ঝড়।

জানা যায়,গত ২৬ মার্চ প্রভাষক শামীমা আক্তার মিনু তার ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছেন… আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস পালন। আমাদের কতটা অধঃপতন হয়েছে কষ্ট করে একটু ভাবুন । এই দিনকে কেন্দ্র করে স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা প্রায় ১মাস ধরে অনুশীলন করে কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে ও অন্যান্য প্রতিযোগিতার জন্য। তারপর অনেক উৎসাহ আনন্দ নিয়ে রোদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। আর এদিকে বিচারক মন্ডলী সুন্দরভাবে সেজেগুজে এসে আরামে বসে গল্পে মেতে থাকে। তারা ভালোভাবে সময় নিয়ে দেখেই না। আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখে কাদেরকে পুরস্কৃত করবে। এত কষ্ট করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে সামান্য কয়েক টাকার একটা পুরস্কার নিয়ে যাওয়ার আশায় শিক্ষার্থীদের এত আনন্দ উল্লাস। কিন্তু খুবই কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এগুলো পায়। বাকি প্রতিষ্ঠান চলে যায় খালি হাতে। বাকি পুরস্কার বরাদ্দ থাকে লোক দেখানো বিচারকদের জন্য, সাংবাদিক নামের কিছু মানুষের জন্য, সুধী সমাজের জন্য, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য। এই হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা দিবস পালন। সব জায়গাতেই স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, মাইকের সামনে বড় বড় বুলি, শুধু লোক দেখানো,দায়সারা। দেশত্ববোধ থেকে কিছুই করছি না। আমরা বাচ্চাদের কি শেখাবো? হায়রে আমার স্বাধীনতা। (লেখাটি প্রকৃত দেশপ্রেমিকের জন্য প্রযোজ্য নয়)

এরপর ২৭ মার্চ ওই প্রভাষককে পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হয়।
ওই চিঠিতে উল্লেখ করেন,২৬ মার্চ ২০২৪ খ্রি. তারিখে পাংশা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত এ সরকারি অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২৭ মার্চ ২০২৪ খ্রি. তারিখে আনুমানিক সকাল ৮ টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শামীমা মিনু নামে তার নিজ ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্টের মাধ্যমে বিষোদগার করেন এবং অনুষ্ঠানের কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রতিযোগিতার বিচার কার্যক্রম ও পুরস্কার প্রদানকে প্রশ্নবিদ্ধ দাবী করে অযৌক্তিকভাবে উপজেলা প্রশাসনকে হেয় প্রতিপন্ন করেন।

নোটিশে আরও উল্লেখ করেন,প্রভাষক শামীমা মিনু তার ফেসবুক আইডিতে যা লিখেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বিষয়গুলো নিয়ে জনমনে অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করেছে। যা সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৯ এর অনুচ্ছেদ ১০ এর উপানুচ্ছেদ (ঙ), (ছ) এবং (ঝ) অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের জন্য পরিহারযোগ্য কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বেআইনী পোস্টের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আপনার বিরুদ্ধে কেন দেশের প্রচলিত আইনে মামলা দায়ের করাসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে না তার জবাব আগামী ০৭ কার্যদিবসের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারী বরাবর লিখিতভাবে দাখিলের জন্য বলা হলো।

এবিষয়ে প্রভাষক শামীমা আক্তার মিনু বলেন, আমি তো অবাক হয়ে গেছি! কি এমন লিখেছি? যার জন‍্য কারণ দর্শানো নোটিশ। সেদিন আমার ছাত্ররা সারাদিন রোদের মধ্যে ছিল। ওরা আনন্দ উল্লাস করেই মাঠে এসেছে, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণও করেছে। আমি পাশেই ছিলাম আমার দৃষ্টিকুটু লেগেছে। যারা বিচারকের দ্বায়ীত্বে ছিল তারা হাসি ঠাট্টায় ব‍্যস্ত। শিক্ষার্থীদের ডিসপ্লেটা একটু দেখলেন না, এমনকি মাইকে মিউজিক শেষ হওয়ার আগেই তারা মিউজিক বন্ধ করে দিলেন। এরপর আমার ছাত্ররা এসে কান্না করে বলছে ম‍্যাডাম আমরা এত কষ্ট করলাম অথচ আমাদের ডিসপ্লেটা দেখলো না। তখন আমার খুব কষ্ট লেগেছে। যে ওরা দেশটাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে অথচ সেটা দেখার সময় আমাদের নেই। সেই কষ্ট থেকেই আমি ফেসবুকে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম।

প্রভাষক শামীমা আক্তার মিনু আরও বলেন, ফেসবুকের ওই পোষ্ট দেশবিরোধী হয় কি করে? সেটা আমার জানা নেই। আর ইউএনও আমাকে কিভাবে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় সেটা আমারও প্রশ্ন?

এব্যাপারে পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরীর বক্তব্য জানতে শুক্রবার রাতে বারংবার ফোন দেয়া হলেও তার ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার WhatsApp এ কল করেও পাওয়া যায়নি।


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন