মোঃ মোমিন ইসলাম
প্রতিনিধি,নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
ঈদ মানেই আনন্দ ঈদ মানেই অন্যরকম এক ধরনের অনুভূত, মনের কোনে জেগে উঠে এক নিবিড় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা টেনে নিয়ে যায় পরিবার-পরিজনের কাছে। শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে,শহরের যানজট আর কলহ পূণ্য পরিবেশ থেকে বেরিয়ে মন ছুটে যায় পরিবারের কাছে যেখানেই রয়েছে প্রকৃত প্রশান্তির শান্তি। তাইতো সবাই যাত্রা পথে যানজট আর ভোগান্তি নিয়ে পাড়ি দেয় পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। আর তা যদি হয় দীর্ঘদিন পর পরিবারের কাছে ফিরে যাবার অপেক্ষা তাহলে তা হয় আরো উৎসবমুখর এবং আনন্দময়। সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার উদ্দেশ্যে। ক্লাস, পরীক্ষা আর টিউশনির ব্যস্ততায় সাধারণত হয় না দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফেরা লম্বা কোন ছুটি ছাড়া। বাসা থেকে কয়েকশত কিলোমিটার দূরে আসা আইন ও বিচার বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ আবু হাসান বলেন,
“প্রবাসীরা যখন দেশে আসে তখন দীর্ঘ ৫-১০ বছর পর আসে৷ তখন যেমন তাদের আনন্দ হয় ঠিক সেইরকম-ই আমার আনন্দ হচ্ছে৷ কারণ আমার মনে হয় আমিও মিনি বিদেশে থাকি৷ বছরে ২-৩ বার বাসায় যাওয়া হয়৷ এতদিন পর বাসায় আসলে মনে হয় একাদশে বৃহস্পতি৷ কারণ এখানে মা,বাবা,ভাই,বোন এবং সকল আত্মীয়স্বজনদের এক মিলনমেলা তৈরি হয়৷ এই অনুভূতি শুধুমাত্র যারা আত্মীয়স্বজনদের সাথে সম্পর্ক রাখে তারাই বুঝবে৷ ইদের আনন্দ একদিনেই শেষ৷ অর্থাৎ এটা ক্ষণস্থায়ী৷ আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে বাইরে থাকি তা যদি পূরণ হয় তবে সেই আনন্দ হবে চিরস্থায়ী৷ তখন প্রতিদিনই ইদ মনে হবে” ৷
তাইতো যারা ঈদকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন পর পরিবারের কাছে যারা ফিরে যায় তাদের বাড়ি ফেরার আনন্দটা একটু বেশি হবারই কথা। তবে পৃথিবী নামক এই ভূখণ্ডে টিকে থাকতে হলে সবাইকে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে হবে পরিবার- পরিজনের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। ক্লাস পরিক্ষা জীবনের একটা অংশ সেটিকে মানিয়ে নিতে পারলেই জীবন হয়ে উঠে সফল। হাজারো ক্লাস আর পরিক্ষার মাঝে একটু ছুটিতে বাড়ি যেতে পেরে নিজের অনুভুতি জানাতে গিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মোসা: তাহরিমা আক্তার পুনম বলেন,” অনেকদিন পরে বাড়ি যেতে পেরে ভালো লাগছে কিন্তু ছুটির পরেই সেমিস্টার পরিক্ষা এবং ছুটি ও কম এটা নিয়ে খারাপ লাগছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসা দুরে হওয়ায় স্বল্প কিছু সময়ের জন্য বাসা যাওয়া হয়ে ওঠে না ফলে দীর্ঘদিনে ব্যবধানে বাসা যেতে পারছি
ব্যাপার টা অনেক আনন্দের!
দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরতে পেরে লোক -প্রসাশন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাত খানম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, পরিবারকে ছেড়ে থাকতে অনেক কষ্ট হয়। বিশেষত রমজান মাসে ইফতার এবং সেহরিতে পরিবারের সবার কথা খুব মনে পড়ে। দেরিতে হলেও বাড়ি ফিরে বাকি রোজাগুলো পরিবারের সাথে ইফতার এবং সেহরি করতে পারব। তাই দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।
কুড়িগ্রাম থেকে জীবিকার উদ্দেশ্যে ছুটে আসা আমিনুল ইসলাম নামে এক নির্মান শ্রমিক বলেন,পরবারের ছেলে মেয়েদের রেখে এতো দুরে এসে কাজ করতে অনেক কষ্ট হয় কিন্তু কিছুই করার নেই কারন খেতে তো হবে ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি ফোটাতে হবে,তাদের হাসিতেই আমার সুখ তারা সুখে থাকলে আমিও খুশি।
সিরাজ উদ্দিন নামের ৭৫ বছরের নির্মানাধীন ভবনের এক সিকিউরিটি পরিবারের স্ত্রী সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করে চলেছেন এই বৃদ্ধ বয়সেও। চোখ ছলছল যে বয়সে তার ছিল অবশর সময় পার করার কথা সে বয়সে এসেও তাকে বইতে হচ্ছে পরিবারের ঘানি। সন্তান রা সন্তান রা তেমন স্বাবলম্বী না হওয়ায় বহন করতে পারেনা বৃদ্ধ মা- বাবার বোঝা তাইতো আজো এই বয়সে বইতে হচ্ছে পরিবারের ভার।
চাকরির শুরুর দিকে পরিবার ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হতো বিশেষ করে ঈদের সময়ে পরিবারের কথা অনেক মনে পড়তে। যেহেতু আমাদের ছুটি কম তাই কষ্ট হলেও জীবিকার অন্বেষনে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি কথাগুলো বুকভরা কষ্ট নিয়ে বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আনসার সদস্য মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।
উল্লেখ্য যে গত ৩ এপ্রিল, বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার মুখার্জি,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মাসুম হাওলাদার, অগ্নিবীণা হলের প্রভু হোস্ট অধ্যাপক কল্যাণাংসু নাহা, দোলনচাঁপা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মাসকুরা রিদম, এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক নুসরাত শারমিন আক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় গত ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ১৭ তম সাধারণ অনুষ্ঠিত ১৭ তম সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিধি ০২ এবং ২০২৪ সালের ক্যালেন্ডার নির্ধারিত ছুটির তালিকা অনুযায়ী পবিত্র শবে ই কদর, জুমাতুল বিদা, পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং পহেলা বৈশাখ ১৪৩১ উপলক্ষে আগামী ৫/৪/২০২৪ রোজ শুক্রবার বিকাল ৩.০০ ঘটিকা হতে ১৭ এপ্রিল বুধবার সকাল ৫.৫৯ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হল সমূহ বন্ধ থাকিবে। তাই সকল ছাত্র-ছাত্রীদের আগামী ৫ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল ৩.০০ টার মধ্যে হল ছাড়া নির্দেশ দেওয়া হয় ।