• মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১১:৩০ অপরাহ্ন

ফুলবাড়ীতে বৃক্ষ প্রেমিক হরে কৃষ্ণর প্রেম শুধু বৃক্ষের সাথে

মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন
মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন / ৮৫
সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

মোঃ নাজমুল হাসান, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম

ফুলবাড়ীর গাছ সেবার ফেরিওয়ালা যুবক হরেকৃষ্ণ
যেখানেই রোগাক্রান্ত গাছের কথা শোনেন সেখানেই ছুটে যান গাছের সেবায়! যেখানেই রোগাক্রান্ত গাছ চোখে পড়ে সেখানেই যত্ন সহকারের গাছের পরিচর্যাসহ চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদগ্রীব হয়ে পড়েন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের উত্তর বড়ভিটা গ্রামের গাছ প্রেমিক মৃত- মনোরঞ্জন রায়ের পুত্র গাছ সেবার ফেরিওয়ালা যুবক হরেকৃষ্ণ রায় (৪৫)।
অন্যান্য গাছের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থকরী গাছ সুপারি ও নারিকেল গাছের চিকিৎসা প্রদানে যুবক হরেকৃষ্ণ রায় এলাকায় কুড়িয়েছেন সুনাম। এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার গাছ সেবার এই পরিধি বিরাজমান। কারও নারিকেল গাছ ও সুপারি গাছের রোগ দেখা দিলেই হরেকৃষ্ণ রায়ের পরামর্শ চিকিৎসা সেবায় গাছের সুস্থ্যতা ফিরে আসছে।
এলাকাবাসীর গাছের সেবা দিতেই যুবক হরেকৃষ্ণ রায় সকাল হলেই বাড়ি থেকে বিড়িয়ে ছুটে যান এক প্রান্তর থেকে অন্য প্রান্তরে। হাতে বাইসাইকেল ও কাধে ্েস্প্র মেশিন যেন নিত্যসঙ্গী। হরেকৃষ্ণ রায়ের মতে এই স্প্রে মেশিনটাই তার লক্ষী। এই স্প্রে মেশিন দিয়েই স্প্রে করে তিনি অসংখ্য মরা গাছকে জীবিত করার প্রচেষ্টা চালান ও তাতে সফল হন।
হরেকৃষ্ণ রায় মাটি বাহিত ও ছত্রাকজনিত সুপারি ও নারিকেল গাছের ৪ টি রোগের চিকিৎসা প্রদান করেন। তা হলো- গাছের পাতায় মড়ক ও পাতা ঝলসানো রোগ, পাতায় দাগ পড়া রোগ, গোড়া পঁচা রোগ ও গাছের করম পঁচা রোগ ইত্যাদি।
স্থানীয় পূর্ব চন্দ্রখানা বহুূমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সুপারি বাগান মালিক বিনোদ চন্দ্র রায় এ প্রতিবেদকে জানান, আমার প্রায় শতাধিক সুপারি গাছের বাগান আছে। আমার একটি বাগানের সুপারি গাছে পাতামরা গাছ মরে যাওয়ার উপক্রম হলে আমার পাশ^বর্তী গাছ সেবার ফেরিওয়ালা হরেকৃষ্ণ রায় দেখে ওই বাগানের পরিচর্যা ও চিকিৎসা সেবা দেয়ার পড়ে বাগানের সুপারি গাছগুলো প্রাণ ফিরে পায়।
স্থানীয় উত্তর বড়ভিটা গ্রামের কৃষক নুর মহাম্মদ জানান, আমার বাড়ির একটি নারিকেল গাছে পাতা মরে যাওয়া রোগ দেখা দিলে এলাকার যুবক হরেকৃষ্ণ রায়ের পরিচর্যা ও গাছের চিকিৎসায় গাছটির প্রাণ ফিরে পায়। হরেকৃষ্ণ রায় এভাবে এলাকার নারিকেল, সপারি গাছসহ অনেক গাছ-গাছালির উপকার করে আসছে। আমির তার উন্নতি কামনা করছি।
গৃহিণী রজীনা আক্তার হাসি জানান, আমার একটি নারিকেল গাছ অজানা রোগ ধরে প্রায় মারা যাওয়ার উপক্রম হয়। আমরা গাছটি থেকে ফল পাওয়ার আশা অনেকটা ভুলেই গেছি। এরইমধ্যে আমাদের এলাকার গাছ সেবার ফেরিওয়ালা যুবক হরেকৃষ্ণ রায় নারিকেল গাছটি দেখে পরিচর্যা ও চিকিৎসা সেবা শুরু করলেই মাত্র দেড় মাসের মধ্যে মারা যাওয়ার উপক্রম এই গাছে সবুজ পাতা গজাতে শুরু করে। গাছটি প্রাণ ফিরে পায়।
এ প্রসঙ্গে গাছ সেবার ফেরিওয়ালা হরেকৃষ্ণ রায় এ প্রতিবেদককে জানান, আমি ছোটবেলা থেকে গাছ প্রেমিক আমার স্বর্গীয় পিতা মনোরঞ্জন রায়ের কাছ থেকে গাছ সেবার হাতে খািড় শিক্ষা নেই। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসে কন্দাল ফসল উৎপাদানের উপর মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর গাছের পরিচর্যা ও রোগ বালাইয়ের উপর কাজ শুরু করি।
গাছেরও প্রাণ আছে, গাছও বাঁচতে চায় এমন আবেগঘন ভালোবাসা থেকে আমি আমার এলাকায় গাছ সেবার কর্মে নিয়োজিত হই। যখানেই রোগাক্রান্ত গাছ চোখে পড়ে সেখানেই যতœ সহকারের গাছের পরিচর্যাসহ চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি আমি। আমার প্রচেষ্টায় এলাকায় নারিকেল, সুপারিসহ শতশত রোগাক্রান্ত গাছ-গাছালি প্রাণ ফিরে পায়। আমি আমার বাকী জীবনটা গাছের পরিচর্যা ও চিকিৎসা সেবায় শেষ করতে চাই।
গাছ সেবার ফেরিওয়ালা হরেকৃষ্ণ রায় আরও জানান, অমি অনেক অসহায় গাছ মালিকের রোগাক্রান্ত গাছের চিকিৎসা ও পরিচর্যা বিনামূল্যে করে থাকি। তবে আমি নিজের থেকে গাছের সেবা করে থাকলেও আমার গাছ পরিচর্যার বিশেষ কোনো পোশাক নেই।
একটি বড় স্প্রে মেশিনের অভাবে গাছ সেবায় আমার সমস্যা হচ্ছে। আমি যদি সরকারি বে-সরকারি পর্যায় সহযোগিতা পেতাম তাহলে আমার গাছ সেবা ও গাছের পরিচর্যার কাজ আরও একধাপ এগিয়ে যেত। এ অবস্থায় আমি সরকারি বে-সরকারি এনজিও বা সংস্থাসহ স্ব-হৃদয়বান মানুষের সহযেগিতা কামনা করছি।


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন