চৈত্র শেষে বৈশাখ। দেশে পক্ষকালব্যাপী বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। মিলছে না বৃষ্টির দেখা। তীব্র তাপ আর ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। সেই সঙ্গে পুড়ছে কৃষকের কপাল। চারদিকে সবুজ বোরো ধানের সবুজ পাতার উছলে পড়া ঢেউ যখন কৃষকের মনে আনে সুখ, ঠিক তখনই তীব্র তাপে বোরোক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। আর প্রকৃতিগত এ সমস্যায় সারাদেশের মতো জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার বোরো চাষিদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ।
মাঠের পর মাঠজুড়ে সেচযন্ত্র থাকলেও বিদ্যুতের দেখা মেলা ভার। লোডশেডিংয়ে নাকাল কৃষককুল। দিনে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ মিললে কষ্ট করে সেচ দেওয়া পানিও জমিতে বেশিক্ষণ থাকছে না। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মতো। এতে করে সেচ পাম্পগুলো ঠিকমতো চালাতে পারছেন না কৃষকরা। বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় মোটর পুড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, পানির অভাবে জমি ফেটে যাচ্ছে। ধানের থোড় বের হওয়ার পর কিছু কিছু জমিন শুকিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ অবস্থার পরিবর্তন না হলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের।
উপজেলার ফুলকোচা গ্রামের কৃষক সুজন মিয়া বলেন, ‘বোরোর আবাদ কইরা আমরা বর্তমানে খুব বিপদের মধ্যে আছি। মাঠে যে থুর ধানগুলা বাইর হইতাছে, ঠিকমতো সেচ দিবার পাইতেছি না। এই ধানগুলা চিটা হইব।’
কমলাবাড়ী গ্রামের কৃষক জাবেদ আলী বলেন ‘কি আর কমু, গলা ঝড়াইয়া আহে, আবাদ তো নষ্ট হইয়া গেল। তাপের চোটে ক্ষেতে পানি থাহে না। মটর দিয়ে পানি দিমু কারেন্টও থাহে না, আহে আর যায়। মটর ইস্টার্ট দেই ক্ষেতে পানি যাওয়ার আগেই কারেন্ট যায় গা। এহন আংগরে মরণ ছারা কোনো উপায় আছে কন। পানি দিবের না পাইলে তো সব শ্যাষ।’
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় এবার উপজেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ২৫০ হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ২০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। হিসাবমতে ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ কম হলেও ফলন দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পুষিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা ছিল বেশি।
তীব্র তাপপ্রবাহ আর লোডশেডিংয়ে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে কালবেলাকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, প্রকৃতিগত সৃষ্ট এ সংকট আর লোডশেডিং সমস্যায় উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, উপজেলার বোরো আবাদের প্রায় ৩০ শতাংশ ধান পেকে যাওয়ার কারণে এই ধানগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না। তবে বাকি যে ধানগুলোর থোড় অর্থাৎ বের হচ্ছে যদি এ রকম তাপপ্রবাহ আরও সপ্তাহ নাগাদ থাকে, তাহলে গাছের গোড়ায় পানি না থাকার কারণে ধানে চিটা হতে পারে। আর এজন্য প্রত্যেকটি এলাকায় গ্রুপভিত্তিক কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকেও আমরা অনুরোধ করেছি সংকট মোকাবিলায় রাত ১২টার পর থেকে নিরবচ্ছিন্ন টানা চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেওয়ার, যেন কৃষক সেচ দিতে পারেন। পানির কারণে ধান গাছের পরাগায়ন যাতে ব্যাহত না হয়। আর ধান ছাড়া অন্যান্য ফসলে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও জানান তিনি।