• বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৩ পূর্বাহ্ন

বৃষ্টিপাত কম হওয়ার ফলে এই মৌসুমেও স্বাভাবিক হচ্ছে না ধনবাড়ী উপজেলার তাপমাত্রা। একসময় এখানে ছিল পর্যাপ্ত গাছপালা ও ঝোপঝাড়। এগুলো এখন প্রায় নিঃশেষ। এতে প্রভাব পড়েছে জনজীবনে।

মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন
মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন / ৭৮
বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

ধনবাড়ীত তীব্র তাপদাহে রাতের আঁধারে ধান কাটছে কৃষক

জহিরুল ইসলাম মিলন (ধনবাড়ী) টাঙ্গাইল

সারা দেশের নেয় ধনবাড়ীতেও তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। গতকাল ধনবাড়ীতে তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই। তীব্র তাপপ্রবাহ ও বৃষ্টি না হওয়ার কারণে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। ফলে বছরের বেশিরভাগ সময়ই এই জেলায় বিপজ্জনক মাত্রায় উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে।

অতিরিক্ত গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে ধনবাড়ী উপজেলা বাসীর জনজীবন। মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। পেটের তাগিদে কাজের ও ব্যবসার জন্য মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই বসে থাকছেন ঘরেই। স্থবিরতা নেমে এসেছে প্রতিটি শ্রেণী পেশার মানুষের মাঝে।

আর এই তাপদাহের ফলে বেশ বিপাকে পড়েছেন ধনবাড়ী উপজেলার বোরো ধান চাষীরা। অতিরিক্ত গরমে দিনের বেলা পারছেন না পাকা ধান কাটতে। তাই বাধ্য হয়ে ধান কাটার সময় হিসেবে রাতের বেলা বেছে নিয়েছেন উপজেলার অনেক চাষী।

স্থানীয় কৃষকরা জানায়, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ধনবাড়ী উপজেলার কৃষিশ্রমিকের সংকট চরমে পৌঁছেছে। গত কয়েক দিন ধরে বোরো জাতের ধান পাক ধরায় কৃষকরা কাটা শুরু করেছেন। গরমের কারণে কৃষি শ্রমিকের অভাবে তারা ধান তুলতে পারছেন না।

ইতিমধ্যেই ধানের পাক ধরেছে এবং কাটাও শুরু হয়েছে । কিন্তু কৃষিশ্রমিকের সংকটের কারণে ধান কেটে ঘরে আনতে পারছেন না। আগে যেখানে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় শ্রমিক পাওয়া যেত এখন তীব্র গরমের কারণে এখন ৮০০/ ৯০০ টাকা মজুরি দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। সময়মতো ধান ঘরে তুলতে না পারলে ফলন কম হবে।

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে কৃষকরা মাঠে বেশি সময় কাজ করতে পারেন না। ধান ক্ষেত এমনিতে গরম থাকে আর অতিরিক্ত গরমের কারণে কৃষকরা বেশি সময় ধরে কাজ করতে পারেন না। অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়ে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অতিরিক্ত কষ্টের কারণে তারা এখন আর মাঠে কাজ করতে চান না। শ্রমিকের অভাবে তাই চরম সংকটে পড়েছেন চাষিরা। এই জন্য বিকল্প পথ বেছে নিয়েছে স্থানীয় চাষিররা। তারা এখন দিনে বাড়িতে থাকবে রাতে চাদের আলোতে ধান কাটবে বলে জানিয়েছে ধনবাড়ী উপজেলার স্থানীয় কৃষকরা।

ধনবাড়ী উপজেলার কৃষি অফিসার মোঃ মাসুদুর রহমান জানায়, ধনবাড়ী উপজেলা সাতটি ইউনিয়নে ১০০০০ হাজার ৩০০ শত ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে । তবে একটানা চলা প্রচন্ড তাপদাহে ধানের উৎপাদনে কিছুটা ব্যঘাত ঘটেছে বলে ধারণা করছে কৃষিবিভাগ।

ধনবাড়ী উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের কৃষক আজিজুর রহমান রনি জানান, ভোরে মাঠে গিয়ে ধানের জমিতে কাজ শুরু করতেই সূর্য উঠছে। সূর্যের তাপে গরমে শরীর ঘেমে যাচ্ছে। বেশি সময় মাঠে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত তাপের কারণে ধান গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। জমিতে পানি জমিয়ে রাখলেও শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই ৪ জন কৃষক নিয়ে চাঁদের আলোকে সঙ্গী করে ধান কাটা শুরু করি। এতে অনেকটাই স্বস্তি মিলেছে ।

যদুনাথ পুর ইউনিয়নের ধানচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি রাতের বেলায় কাজের মানুষ নিয়ে ৪০ শতাংশ জমির ধান কাটার কাজ শুরু করেছি। মূলত দিনের বেলা হিটস্ট্রোকের ভয়ে অনেকেই ধান কেটে দিতে রাজি হয়নি। পরে রাতের বেলা ধান কাটা শুরু করি। রাতের বেলা জমিতে যেমন বাতাস থাকে তেমনি ঠান্ডাও থাকে। আমি মনে করি এই সময়ে রাতেই ধান কাটার উপযুক্ত সময়।

ধনবাড়ী উপজেলার কৃষি অফিসার মোঃ মাসুদুর রহমান
বলেন, প্রচণ্ড তাপদাহে আমাদের কৃষকদের দিনের বেলা ধান কাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। তাই যারা এই গরমে মাঠে কাজ করবেন তাদের প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন