• শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন

উঁচু-নিচু ঝিনাইদহ-যশোরে মহাসড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন
মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন / ৬৫
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
উঁচু-নিচু ঝিনাইদহ-যশোরে মহাসড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

ভারী গাড়ির চাকার চাপে পিচঢালাই সরে স্থানে স্থানে দেখা দিয়েছে গর্ত ও ঢিবি। পাশ থেকে দেখতে ঢেউ খেলানো। কিছু জায়গায় ঢিবিগুলো দেখতে অনেকটা সড়ক বিভাজকের মতো। ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের চিত্র এটি। ঝুঁকি নিয়েই জাতীয় মহাসড়কটিতে যানবাহন চলাচল করছে। মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।

ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের ঝিনাইদহে অংশের এমন বেহাল দশা তিন থেকে চার মাস ধরে। তবে গত দুই সপ্তাহে সড়কটির অবস্থা মারাত্মক রূপ নিয়েছে। তাপপ্রবাহের কারণে বিটুমিন গলে সড়কটির বেশ কিছু অংশ অনেকটাই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর, মাগুরা পার হয়ে এই সড়ক শুরু। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা-যশোরে চলাচলকারী পরিবহনগুলো এই সড়ক ব্যবহার করত। পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা রুটের পরিবহনগুলো ফরিদপুরের ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাট হয়ে চলাচল করে। আর যশোরের পরিবহনগুলো ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, নড়াইল হয়ে চলাচল করে।

গত শনিবার দেখা গেছে, ঝিনাইদহ শহর থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কের বেশ কিছু জায়গায় ভারী গাড়ির চাপে পিচঢালাই সরে গিয়ে পাশে ঢিবির মতো তৈরি হয়েছে। সড়কের চুটলিয়া, তেঁতুলতলা, বিষয়খালী, গড়িয়ালা, কয়ারগাছি, খয়েরতলাসহ বেশ কিছু অংশের অবস্থা বেশ খারাপ।

গর্ত ও ঢিবির কারণে উঁচু-নিচু সড়কে চলাচলে বেগ পেতে হচ্ছে চালকদের। গাড়ি একবার ডানে কাত হয় তো আরেকবার বাঁ দিকে কাত হয়। ছোট গাড়িগুলোকে ভুগতে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সড়কের গর্ত ও ঢিবিতে ধাক্কা লেগে এসব যানবাহন মাঝেমধ্যেই উল্টে যায়। আর মোটরসাইকেলচালকদের জন্য তো রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে সড়কটি।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে ঢিবিগুলো মেশিন দিয়ে কেটে দেওয়া হয়। কিন্তু দুই-চার দিন যেতে না যেতেই আবার আগের অবস্থা হয়ে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়েছে, সড়কটি দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বিকল্প পথে অনেকটা ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে এসব যানবাহনকে।

ওই পথে চলাচলকারী ট্রাকচালক আব্বাস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের দিনে গরুর গাড়ির চাকায় কাঁচা রাস্তায় এ রকম গর্ত হতো। আর এখন পাকা সড়কেই সেটা হচ্ছে। অনেক কষ্ট করে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।’

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালীর বটতলা এলাকা থেকে আবদুর রাকিবের চায়ের দোকান পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের অবস্থা নেই। দুই সপ্তাহ ধরে এ অবস্থা। ওই সড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার খয়েরতলা এলাকায় আলমগীর হোসেন নামের একজনের প্রাইভেট কার আটকে যায়। সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।

আলমগীর হোসেন বলেন, সড়কটির এ অবস্থা তাঁর জানা ছিল না। জানা থাকলে তিনি কখনো এ পথে আসতেন না। অনেক কষ্টে গাড়ি সড়কের পাশে নিয়ে এসেছেন, এখন গ্যারেজে নিতে হবে। দেখতে হবে কোনো সমস্যা হলো কি না।

এদিকে সড়কের এমন অবস্থার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী রকিব হোসেন বলেন, সম্প্রতি রুবেল হোসেন নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে আহত হন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সড়কের ঢিবির কারণে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বলেও জানান তিনি।

সড়কটির এমন অবস্থার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দুষছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করার কারণে সড়কের এ অবস্থা হয়েছে। বছরখানেক আগে সড়কের কাজ শেষ হয়। ছয় মাস না যেতেই সড়কটির কিছু অংশে সমস্যা দেখা দেয়।

তবে কাজের মান খারাপ ছিল না বলে দাবি করেন ঠিকাদার মিজানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কাজটি চার বছর আগের। এত দিন ভালো ছিল, এখন কেন এমন হচ্ছে, সেটা বলতে পারছেন না। অতিরিক্ত তাপের কারণে হতে পারে।

অতিরিক্ত তাপের কারণে পিচ গলে যাওয়া নিয়ে ঠিকাদারের যুক্তি মানতে নারাজ প্রকৌশলীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) স্থানীয় এক প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, শুধু তাপের কারণে এমনটা হবে না; এখানে নির্মাণত্রুটি রয়েছে। বিটুমিনের গুণগত মান খারাপ হওয়ায় এমনটা হতে পারে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সড়ক নির্মাণকাজে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেখানে ৮০-৯০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করলে সড়ক ড্যামেজ (নষ্ট) হবেই। ওই সড়ক ড্যামেজ হয়ে গেছে। যে অবস্থা অন্য কোথাও দেখা যায় না।

সড়কের এই বিড়ম্বনা থেকে শিগগিরই মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। সম্প্রতি ঝিনাইদহ-যশোর সড়ক উইকেয়ার সেকশন (ফেজ-১) ছয় লেন প্রকল্পের অধীন সড়কটি হস্তান্তর করা হয়েছে। ফলে জেলা সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

যোগাযোগ করা হলে ঝিনাইদহ সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার পারভেজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়েছে। যে কারণে এখন তাঁদের পক্ষ থেকে নতুন করে কিছু করার নেই।

তবে চলাচলের এ বিড়ম্বনার দ্রুত সমাধান চান এ সড়কে চলাচলকারী ও স্থানীয় লোকজন। বিষয়খালী এলাকার বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম বলেন, ঢিবি কেটে ও গর্ত ভরাট করে তেমন সুফল মিলছে না। এর একটা স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। বর্তমানে সড়কে ঢিবির অবস্থা দেখে অনেক গাড়িচালকই মজা করে বলছেন, ‘এটা আট লেনের সড়ক।’


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন