ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ। ভারতের গিয়ে আনোয়ারুল আজিমের নিখোঁজের ঘটনায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি পুলিশ সূত্র জানান, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুজনকে পুলিশ বাংলাদেশে আটক করেছে। আটক হওয়া ওই দুই ব্যক্তি সম্প্রতি কলকাতা থেকে ফিরেছেন।
আটক হওয়া দুজনের মধ্যে একজনের নাম আমানুল্লাহ।
পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের একটি দল কেরাণীগঞ্জ থেকে শুরুতে আমানুল্লাহকে নামের একজনকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যগুলো ভারতের একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে জানালে তাঁরা জানান যে আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন।’
আনোয়ারুল আজিমের একান্ত সচিব আব্দুর রউফ আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে খুনের ঘটনা জানতে পারছি। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা সম্ভব হচ্ছে না।’
পুলিশ সূত্র জানায়, ভারতে গিয়ে ১২ মে সন্ধ্যা সাতটার দিকে আনোয়ারুল কলকাতায় তাঁর পূর্বপরিচিত বন্ধুসম্পর্কীয় গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। গোপালের সাথে তার ২৫ বছরের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৩ মে বেলা দুইটার (কলকাতার স্থানীয় সময়) দিকে আনোয়ারুল চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বের হন। তখন গোপালকে বলে যান, তিনি সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসবেন। এরপর আর বাসায় না ফেরার কারণে গত ১৮ই মে কলকাতার বরাহনগর থানায় গোপাল বিশ্বাস একটি সাধারণ ডাইরি (জিডি) করেন।
গোপাল বিশ্বাস জিডিতে উল্লেখ করেন, ‘আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে তাঁর ২৫ বছর ধরে পারিবারিক সম্পর্ক। ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আনোয়ারুল আজিম কলকাতার মণ্ডলপাড়া লেনে তাঁর (গোপাল বিশ্বাস) বাড়িতে আসেন। তিনি কলকাতায় আসেন ডাক্তার দেখাতে। পরদিন (১৩ মে) স্থানীয় সময় (কলকাতা) বেলা পৌনে দুইটার দিকে ডাক্তার দেখানোর জন্য গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ারুল আজিম। যাওয়ার সময় তিনি (আনোয়ারুল) বলে যান, দুপুরে খাবেন না। সন্ধ্যায় ফিরে আসবেন। পরে তিনি কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে এসে নিজেই গাড়ি ডেকে চলে যান।’
জিডির তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজিম সন্ধ্যায় গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ফেরেননি। আনোয়ারুল আজিমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে গোপালকে একটি বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়, বিশেষ কাজে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ফোন করে গোপাল বিশ্বাসকে জানাবেন, গোপাল বিশ্বাসের ফোন করার দরকার নেই। পরে ১৫ মে স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২১ মিনিটে আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে আরেকটি বার্তা আসে। তাতে আনোয়ারুল আজিমের দিল্লি পৌঁছানোর কথা জানিয়ে বলা হয়, ‘আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন, ফোন করার দরকার নেই।’ আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে একই বার্তা বাংলাদেশে তাঁর বাড়ির লোকজন এবং ব্যক্তিগত সহকারীকে পাঠানো হয়।
কলকাতার পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে।
এরপর ১৬ মে আনোয়ারুলের নম্বর থেকে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফের নম্বরে একটি ফোন আসে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বলা হয়, ব্যক্তিগত সহকারী ফোন ধরতে পারেননি। পরে আনোয়ারুল আজিমকে তিনি (ব্যক্তিগত সহকারী) ফোন করেও আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পরদিন ১৭ মে আনোয়ারুলের মেয়ে গোপাল বিশ্বাসকে ফোন করে জানান, তাঁর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তারপর তিনি আনোয়ারুলের পরিচিতদের ফোন করেন। কিন্তু তাঁর কোনো সন্ধান মেলেনি।