নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, কণ্ঠশিল্পী সংগঠক, গবেষক ও কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি খিলখিল কাজী ‘দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার হে, লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার!’ এই গানকে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার (২৫ মে) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবির মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনাসভায় অংশ নিয়ে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এই আহ্বান জানান।
খিলখিল কাজী বলেন, ‘দুর্গম গিরি কান্তার-মরু…’ গানে কাজী নজরুল ইসলাম মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন। আমি সকলের কাছে একটি আবেদন রাখতে চাই যে, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তো আছেই। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। সেই হিসেবে তার এই গানটা আমরা জাতীয় পর্যায়ে প্রতিটি জায়গায় ব্যবহার করতে পারি। নানান চ্যানেল থেকে শুরু করে, স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা সবসময় যেন এই গানটি আমরা গাইতে পারি এবং একে কাঁধে করে এগিয়ে যেতে পারি।
তিনি বলেন, ১৯২৯ সালে কাজী নজরুল ইসলামকে এলবার্ট হলে বাংলার জাতীয় কবি বলে সংবর্ধিত করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেছিলেন নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু। তিনি বলেছিলেন যে, ‘ভারতের নানান প্রদেশে গিয়েছি, নানান জাতীয় সংগীত শুনেছি। কিন্তু ‘দুর্গম গিরি কান্তার-মরু…’ এই গানের মতো কোনো গান আমি কোথাও শুনিনি। তিনি তখন বলেছিলেন, আমাদের ভারত যদি কখনো স্বাধীন হয় বা তখন যদি আমি থাকতে পারি, নিশ্চয়ই কাজীর এই গানটা নিয়ে কাজ করব’।
মানবতার পক্ষে জাতীয় কবির সৃষ্টিশীলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম সাম্যের কথা বারবার বলে গেছেন, মানবতার কথা বলেছেন। মানুষের অপমান, মানবতার অপমানের প্রতি তার লেখনিতে তিনি সবসময় ঘৃণা জানিয়েছেন। আজ পৃথিবীতে কত জাতিগত বিভেদ-লড়াই হচ্ছে। এই মুহূর্তে কাজী নজরুল ইসলামের মতো নির্ভীক ও সাহসী একজন মানুষকে আমাদের ভীষণ প্রয়োজন।
আমাদের স্বাধীন দেশে মানুষকে সঠিক দিক দেখাবার জন্য আমাদের বারবার কাজী নজরুল ইসলামের দিকে ফিরে যেতে হবে। কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য সৃষ্টির সময়ের ব্যপ্তি ছিল মাত্র ২৩ বছর। এর মধ্যে তিনি ১১ বছর সংগীত সৃষ্টি করেছেন। সেই সংগীতে মেহনতী মানুষের গান থেকে শুরু করে ইসলামী গান, শ্যামা সংগীত অন্যতম, যা আমাদের আজও উজ্জীবিত করে।
খিলখিল কাজী আরও বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলিমের বিভেদকে সবসময় ঘৃণা করেছেন, সাম্প্রদায়িকতা ঘৃণা করেছেন এবং অসাম্প্রদায়িকতাকে বেছে নিয়েছেন। সেই চেতনাই সকল বাঙালির মনে তিনি স্থাপিত করে গেছেন। আজকে ১২৫তম জন্মবার্ষিকী তার। আমার মনে হয়, আমরা আজও তার কাছ থেকে অনেক কিছুই গ্রহণ করতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য অনেক দুঃখের ব্যাপার। আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে কাজী নজরুল ইসলামের বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামী জীবনকে এখনো পৌঁছাতে পারিনি। প্রতিটি স্কুল-কলেজে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে ডিবেট হোক, বিভিন্ন লেখালেখি হোক।