ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলীয় এলাকা দুর্গত মানুষের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে। তছনছ হয়ে গেছে এলাকার প্রতিটি বাড়িঘর। ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, অনেক মানুষ খোলা আকাশের নিচে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছে।
অগণিত গাছপালা উপড়ে অভ্যন্তরীণ সড়কে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা সড়ক থেকে গাছপালা অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। সমগ্র উপজেলায় বিদ্যুৎ ও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ তাদের জীবন রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিলেও পরিবার পরিজন নিয়ে অনাগত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। এখনও পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার। উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে শুকনো ও রান্না করা খাবার দুর্গত এসব মানুষের মাঝে সরবরাহ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
তবে দুর্গত এসব মানুষজন বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরেজমিনে এসে তাদের অবস্থা দেখলে, দ্রুত সব সমস্যার সমাধান হবে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে কলাপাড়ায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ১৩০ জনে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ১৪০টি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৬২০টি বাড়িঘর। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে দুর্গত মানুষের মাঝে প্রতি বেলায় রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এখনও দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে, প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরিতে দুই একদিন সময় লাগবে।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, পাউবোর পূর্ব গৈয়াতলা, লেমুপাড়া, চম্পাপুর, মঞ্জুপাড়া, মুন্সী পাড়া, নিজামপুর, জালালপুর, ধূলাসার, বালিয়াতলি, দেবপুর, নাচনাপাড়া, বড় কলবাড়ি, খ্রিষ্টান পাড়া, চরান্ডা, চরম মোন্তাজ, চালিতবুনিয়া বড় বাইশদিয়া বেড়িবাঁধের ২২টি স্পটে ৯.১৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, রিমালের তাণ্ডবে উপজেলার ২৪৬৫টি পুকুর এবং ৭৭৮টি ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে, প্রাথমিকভাবে মৎস্য খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে উপজেলার ২০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকের করলা, ঝিঙা, ঢেঁড়স, পুঁই শাক, গিমা কলমি শাক, চিচিঙ্গা, শসা, কলা ও আমের বাগান।
কলাপাড়া দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিরূপণে কাজ চলমান রয়েছে। বন বিভাগ, কৃষি, শিক্ষা, এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে লিখিতভাবে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর সার্বক্ষণিক তদারকিতে আমরা দুর্গত মানুষকে সহায়তা করে যাচ্ছি।
কলাপাড়া ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা দুর্গত মানুষের জন্য ১৩০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৬ লাখ টাকা, শুকনো খাবার বরাদ্দ পেয়েছি। প্রয়োজনে চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষ মো. মহিববুর রহমান সার্বক্ষণিক কলাপাড়ার দুর্গত মানুষের খোঁজখবর রাখছেন।