নিষ্ঠুর বা বিকৃত মানসিকতার বলে যে কয়েকটি খেলার কুখ্যাতি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল ষাঁড়ের লড়াই। হাজার বছরের পুরোনো এই লড়াইয়ে প্রাণীগুলোকে দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য হত্যা করা হয়। অনেকদিন ধরেই প্রানী অধিকার কর্মীরা খেলার নামে এই নিষ্ঠুরতা বন্ধের জন্য আন্দোলন করে আসছিল অবশেষে অন্তত এক জায়গায় তাদের এই আন্দোলন সফল হলো।
এতদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী এই খেলা শুধুমাত্র আটটি দেশে বৈধ ছিল। তা হলো ইকুয়েডর, ফ্রান্স, মেক্সিকো, পেরু, পর্তুগাল, স্পেন, ভেনিজুয়েলা এবং কলম্বিয়া। তবে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে, কলম্বিয়ার কংগ্রেস মঙ্গলবার (২৮ মে) উত্তপ্ত বিতর্কের পর দেশটিতে ষাঁড়ের লড়াই নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। যার ফলে দেশটিতে শতাব্দী প্রাচীন এই নিষ্ঠুরতার অবসান ঘটাবে।
কলম্বিয়ার আইনপ্রণেতা জুয়ান কার্লোস লোসাদা ঐতিহাসিক এই বিল পাস সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা পেরেছি। আজ, নিষ্ঠুর ষাঁড়ের লড়াই নিষিদ্ধ করার জন্য সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে লড়াই করার পর, আমরা হাজার হাজার প্রাণীপ্রেমী নাগরিককে জানাতে পারি যে কলম্বিয়া এই সংস্কৃতির আড়ালে লুকানো পশু নির্যাতন থেকে মুক্তি পাচ্ছে।’
নিম্ন কক্ষ ৯৩-২ ভোটে বিলটি অনুমোদন করেছে। নতুন নিয়মাবলীতে লড়াই করার জন্য নেওয়া ষাঁড় দত্তক এবং ষাঁড়ের লড়াইয়ের মাঠগুলোকে বিনোদন, ক্রীড়া এবং সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তর করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে, বিরোধীরা এই পরিবর্তনগুলো দেশের সব শহরে বাস্তবায়ন করতে অর্থায়ন কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
কংগ্রেসে বিলটি পাস হওয়ার যাত্রা দীর্ঘ এবং বিতর্কিত ছিল, যা ষাঁড়ের লড়াই নিয়ে কলম্বিয়ার সমাজের গভীর বিভাজনকে আরো প্রতিফলিত করে।
হাজার হাজার কলম্বিয়ান তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ষাঁড়ের লড়াইয়ের উপর নির্ভর করে এবং সরকার এখন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সন্ধান করার দায়িত্ব নিয়েছে। নিষেধাজ্ঞাটি বেশ কয়েকটি অঞ্চলে গভীরভাবে প্রথিত সাংস্কৃতিক অনুশীলনের অবসানকেও নির্দেশ করে।
কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি গুস্তাভো পেট্রো এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন এবং এর নৈতিক প্রভাবগুলির উপর জোর দিয়েছেন। তিনি এক্সে করা এক পোস্টে বলেন ‘যারা অবশেষে মৃত্যুকে প্রদর্শনী হতে দেননি তাদের অভিনন্দন। যারা প্রাণীর মৃত্যুর আনন্দ নেয় তারা মানুষের মৃত্যুতেও আনন্দ পাবে; যেমন যারা বই পোড়ায় তারা মানুষকেও পোড়ায়।’
পেট্রোর অনুমোদনের পর, নিষেধাজ্ঞাটি ২০২৭ সালে কার্যকর হবে যাতে ষাঁড়ের লড়াইয়ের সাথে জড়িতরা অনান্য জীবিকা বেছে নেওয়ার জন্য সময় পাবেন।
কলম্বিয়া অবশ্য প্রথম দেশ নয়। কলম্বিয়ার আগে ব্রাজিল, চিলি, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে এবং গুয়াতেমালা সহ দেশগুলো ইতিমধ্যেই এই খেলা নিষিদ্ধ করেছে।
কলম্বিয়ায় এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপটি প্রাণী অধিকার কর্মীদের জন্য একটি বড় বিজয় এবং তা মানুষকে বিনোদনের জন্য নিষ্ঠুরতা পরিত্যাগ করে আরও মানবিক রূপের দিকে একটি নিতে সাহায্য করবে।