শিক্ষকদের সবচেয়ে কম বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কারণে তুলনামূলক মেধাবীরা এ মহান পেশাকে(শিক্ষকতা) বেছে নিচ্ছেন না।শিক্ষকদের বেতন শুধু কমই নয় রাষ্ট্রীয়ভাবেও তাদের সাথে অবিচার করা হয়।
একজন শিক্ষকের সন্তান হিসেবে যখন ছোটবেলা থেকেই রোজই শিক্ষকদের অসহায়ত্ব দেখতে হয়।ঈদে যখন তাদের বাবার কাছে একটি ভালো পোশাকের জন্য কান্নাকাটি করতে হয়,তখন তাদের বাবা হাতে কাগজ-কলম ধরিয়ে দিয়ে কিছু বাব তাদের সন্তানের দিকে ছুড়ে দেয় একটি গাণিতিক প্রশ্ন।
একজন দিনমজুরের দৈনিক আয় ৩০০টাকা হলে মাসে তিনি কত টাকা আয় করেন?তখন ছেলে মুখে মুখে বাবাকে জবাব দিয়ে বলে ৯হাজার টাকা।বাবা তখন ছেলের কাঁধে হাত রেখে,মাথার চুলে বিলি কেটে বলে বাবা রে তোর এই বাবা একজন শিক্ষক হিসেবে মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেতন পান।
বাবার এই উত্তর শুনে ছেলে আর কোন প্রশ্ন করতে পারেনা বাবা নামের মানুষ টি,লজ্জায় ছেলের সামনে সেদিন বাবার মাথাটা নিচু হয়ে যায় ।ঐ বয়সে বাবার চোখ থেকে টপটপ করে চোখের জল পড়ে।
কেউ কি বলতে পারেন,সে শিক্ষক বাবার চোখ থেকে ঝরে পড়া সেই চোখের জল শিক্ষার মানকে কতটা উপরে টেনে তোলার যোগ্যতা রাখে?কতটা শিক্ষার উন্নত করতে পারবে?
এই যদি হয় একজন শিক্ষাগুরুর জীবন তাহলে একটা সময় হয়তো এদেশে কোন শিক্ষক খুঁজে পাওয়া যাবেনা। এক স্কুল শিক্ষক এর পাশের বাড়ির এক ব্যক্তি ইঞ্জিনিয়ার অফিসে কেরানির চাকরী করতেন।প্রতিদিন বিকালে তিনি তার সন্তানদের জন্য ব্যাগ ঝুলিয়ে বিভিন্ন ধরণের ফলমূল নিয়ে আসতেন।
তখন ঐ শিক্ষকের ছোট ছেলেটা ফলগুলো দেখে ওর মা’ র কাছে ফল খাওয়ার জন্য কত বায়না ধরতো।তখন ছেলেটার বড় ভাই তার মাকে বলতো মা ও মা,বাবাকে বলনা আমাদের জন্য ফল নিয়ে আসতে।তখন ঐ শিক্ষকের স্ত্রী ছেলেটার মা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলতেন বাবাগো তোর বাবার বেতন দিয়ে আমাদের ঠিকমত দুবেলা ডাল-ভাত জোটেনা,ফলমূল তোদের কোথা থেকে এনে খাওয়াবে?সেদিন দেখেছিলাম একজন শিক্ষকের স্ত্রী হিসেবে মায়ের অসহায়ত্ব!
কেউ কি বলবেন একজন শিক্ষকের স্ত্রী হিসেবে মায়ের সেই অসহায়ত্ব শিক্ষার মান কতটা উপরে টেনে তুলবে?
গ্রামের বিভিন্ন ক্লাব,সমিতি বিভিন্ন উৎসবে চাঁদার জন্য যখন শিক্ষকের বাড়িতে আসে। শিক্ষকটি তখন নিজের অসহায়ত্ব ডেকে তাদেরকে অল্প হলেও চাঁদা দেয়ার চেষ্টা করেন।তারপরও সেই লোকগুলো আড়ালে গিয়ে বলে মাস্টাররা আসলে কৃপণ টাইপের হয়।
পাড়ার মুদির দোকানে শিক্ষক বাকিতে সওদা করেন,পরে মাসের বেতন তুলে তার বেশীরভাগই সেই দোকানের ঋণ পরিশোধ করতে চলে যায়।তখন দেখা যায় দিনে দিনে তার ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার খরচ যোগান দেয়াও ঐ শিক্ষক বাবাটির জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।এ যখন অবস্থা পরিবারে কেউ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে
ওই শিক্ষক বাবাটি টাকার অভাবে চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারে না।
শিক্ষক বাবাটি এতসব কষ্টের পরও নিঃস্বার্থভাবে তার শিক্ষার্থীদের নীতি-আদর্শ শিক্ষা দেন।
হাজার কষ্টের পরেও শিক্ষকটি ছেলেদেরকে বলে দেখবি আমার শিক্ষার্থীরা একদিন অনেক বড় মানুষ হবে,আমার খোঁজখবর নিবে।বাস্তবেও শিক্ষার্থীরা অনেক বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত হন কিন্তু কেউ কোনদিন ওই শিক্ষকের খোজ নেয়না। শিক্ষক নামের মানুষটা যখন অসুস্থ্যতার জন্য হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তখন সিট বরাদ্দ পাওয়া যায়না।
মাঝে মাঝে এমন অবস্থা হয় শিক্ষক মানুষটিকে
মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা করাতে হয়।এই হচ্ছে আমাদের দেশের শিক্ষকের মর্যাদা।শুধু কাগজে-কলমে শিক্ষকদের নিয়ে বড় বড় কলাম লেখা হয়,সেমিনারে-বক্তব্যে শিক্ষকদের মর্যাদা নিয়ে মুখে ফেনা তোলা হয় কিন্তু বাস্তবে শিক্ষকরা কীভাবে পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করেন তা কি কেউ কোনদিন খোঁজ নিয়েছেন?
এই শিক্ষকদের হাত দিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলেন,তারপর সেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধেই তারা বিষেদাগার করে শিক্ষকদের উপর্যুক্ত মর্যাদা প্রদান করেন।
একজন শিক্ষকের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসবে জাতির কাছে আমার প্রশ্ন,সারাজীবন শিক্ষকরা এই অসহায় জীবনযাপন শিক্ষার মানকে কতটা উপরে টেনে তোলার যোগ্যতা রাখে?