পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার (০৫ জুন) ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। দেশটির সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি নরেন্দ্র মোদির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। ভারতের নিয়মানুসারে, বুধবার তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে নিজের ও মন্ত্রিসভার পদত্যাগপত্র জমা দেন। এ সময় নতুন সরকার গঠনের দাবি জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি ভবনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দ্রৌপদী মুর্মু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। এ সময় তিনি নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদকে বহাল থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী শনিবার (০৮ জুন) ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বারের মতো শপথ নিতে পারেন নরেন্দ্র মোদি। একই দিনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভারও শপথ অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট।
সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসন। যেখানে বিজেপি জিতেছে ২৪০টি আসনে। ফলে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় নরেন্দ্র মোদিকে এবার সরকার গঠনে এনডিএ জোটের ওপরই নির্ভর করতে হবে। অর্থাৎ তৃতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদির দিল্লিতে সরকার গঠনের চাবিকাঠি আপাতত এনডিএ শরিকদের হাতে
আর এমন পরিস্থিতিতে গুঞ্জন উঠেছে, সরকার গঠনের জন্য তেলেগু দেশম পার্টির প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু ও বিহারের জনতা দল-ইউনাইটেডের (জেডি-ইউ) কর্নধার নীতিশ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট। ইন্ডিয়া জোট চাইছে নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু নরেন্দ্র মোদির জোট ত্যাগ করে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকার গঠন করুক।
দুটি দলই ইন্ডিয়া জোটের সাবেক শরিক। পরে দলবদল করে তারা বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে বৈরিতা ভুলে সরকার গঠনে এই দুই নেতাকে জোটে ফিরিয়ে আনতে চাইছে বিরোধী শিবির।
এর আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, দ্বিতীয় মোদি সরকারের মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক আজ। দিল্লিতে তৃতীয় দফায় সরকার গড়তে জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে বিজেপি। এনডিএ-র বৈঠকে যোগ দিতে নীতিশ-নাইডু ছাড়াও দিল্লিতে পৌঁছেছেন একনাথ শিণ্ডে ও জিতনরাম মাঝি। আজ (বুধবার) এ বৈঠকে বসছে এনডিএ জোট। আর এদিনই ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক।
নীতিশ-নাইডু জোটবদল করবেন কি না- সেই গুঞ্জন আরও ডালপালা বিস্তার করেছে নীতিশ কুমার ও ইন্ডিয়া জোটভুক্ত আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব একই ফ্লাইটে দিল্লি যাওয়ার খবরে। তবে কি নীতিশ-নাইডু জোটবদল করে বিরোধী শিবিরে যোগ দেবেন? কি বলেছেন নীতিশ-নাইডু?
নীতিশ কুমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগী ভোটের ফল বেরোনোর পরই সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছিলেন, তার দল এনডিএ-তেই থাকবে। ইন্ডিয়া-জোটে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই তাদের। এটাও বলা হয়েছে, অতীতে বারবার শিবির বদল করার রেকর্ড রয়েছে নীতিশ কুমারের। তাই এবার এই দুর্নাম আর নিতে চান না তিনি।
আর অন্ধ্রপ্রদেশের ফল সামনে আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডুও। তিনি জানিয়েছিলেন, তার দল এবং বিজেপি একসঙ্গে রাজ্যটিকে পুনর্গঠন করবে। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে তারা নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেই থাকছেন।
তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। দরকষাকষি এবং দেনা-পাওনার খেলায় কে কাকে কাছে টানতে পারবে সেটাই এই খেলার মূল বিষয়। ৯ জুন তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিতে পারেন মোদি। তবে তার আগে যদি জোট সমীকরণ ওলটপালট হয়ে যায়, তাহলে দিল্লির মসনদে হতে পারে পালাবদল।