দুদকের নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে স্ত্রীসহ ভিপি শহীদ তাঁদের সম্পদের বিবরণী কমিশনে দাখিল করেন। তবে সম্পদ বিবরণী দাখিলের পর থেকে চারজন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন ছাড়া ওই অনুসন্ধানের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক , ‘অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য আইনে নির্ধারিত সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। কমিশনের সব কর্মকর্তাকে অনুসন্ধান ও তদন্তকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আগের কর্মকর্তারা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি নথিভুক্তির মাধ্যমে পরিসমাপ্তির জন্য কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। এ পর্যন্ত তিনবার অভিযোগটি নথিভুক্তির জন্য পৃথক তিনজন কর্মকর্তা কমিশনে তাঁদের প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। কিন্তু প্রতিবারই অনুসন্ধান ও তদন্তকাজ ত্রুটিপূর্ণ ও অসমাপ্ত হওয়ায় কমিশন গ্রহণ করেনি।
আর ২০ (খ) অনুযায়ী, তদন্ত কর্মকর্তার অদক্ষতার অভিযোগে কমিশন আইন বা প্রযোজ্য আইনে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে দুদক। তবে এ ক্ষেত্রে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন।
২০২০ সালের জুন মাসের শুরুতে ভিপি শহীদের বিরুদ্ধে ‘বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপকর্মের’ মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রথম দফায় দুদকের উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজকে এই অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি অনুসন্ধান শেষে কমিশনে অভিযোগটি নথিভুক্তির মাধ্যমে শেষ করার জন্য প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে প্রতিবেদনটি ত্রুটিপূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য হওয়ায় নতুন নির্দেশনা দিয়ে দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে কমিশন থেকে দুদকের উপপরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিককে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনিও নথিভুক্তির সুপারিশ করে কমিশনে পুনঃ অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনটি নাকচ করা হয়। এরপর কমিশন তৃতীয় দফায় দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুজ্জামানকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে। তিনিও নথিভুক্তির সুপারিশ করে কমিশন পুনঃ অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ প্রতিবেদনটিও কমিশন নাকচ করে। তিনবার তিনজন উপপরিচালক পদমর্যাদার সিনিয়র কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর সর্বশেষ সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের শেষ দিকে সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন চতুর্থ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। বর্তমানে তিনি অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন।
নিজস্ব অনুসন্ধান এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রজীবনে সিংগাইর কলেজের ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় সবাই তাঁকে ভিপি শহীদ নামে চেনেন। ভিপি শহীদের বাবা আব্দুর রশিদ খান ছিলেন সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। আর্থিক সচ্ছলতার জন্য একসময় একটি ইনস্যুরেন্স কম্পানির মাঠকর্মীর চাকরি নেন ভিপি শহীদ। সিংগাইরবাসীর কাছে তাঁর দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস নেই। কিন্তু সিংগাইর উপজেলায় ১২ শতাংশ জমির ওপর নির্মাণ করেছেন সুদৃশ্য ভবন। নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। বিভিন্ন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক পদকে কাজে লাগিয়ে তিনি এই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
দুদক সূত্র জানায়, ভিপি শহীদ ও তাঁর স্ত্রী নারগিছ আক্তার যৌথভাবে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার সম্পদের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের দেওয়া ঘোষণার মধ্যেই অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মামলার সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে ভিপি শহীদের আয়ের স্বপক্ষে রেকর্ডপত্র যাচাই করা হচ্ছে। দুদকের দেওয়া নথিপত্র অনুসারে ভিপি শহীদ ঠিকাদারি, জমির দালালি ও সিজনাল ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করেছেন।
জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজেদ খান বলেন, দুর্নীতি না করলে দৃশ্যমান কোনো আয় না থাকা সত্ত্বেও শূন্য থেকে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। সম্পদের অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষেই দুদক শহীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে। দুদকের অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য দেশবাসী জানবে বলে আশা করি।
জানতে চাইলে মো. শহিদুর রহমান (ভিপি শহীদ) বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে আমাকে হেয় করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে আসছে। আমার অবৈধ কোনো আয় নেই। আমার সব আয় বৈধ। আমি দুদকে তিন কোটি ৭০ লাখ টাকার হিসাব দিয়েছি। সেসব সম্পদ কোথা থেকে এসেছে, কখন, কিভাবে, কোন ব্যবসা করে আয় করেছি, তার বিস্তারিত তথ্য প্রমাণসহ দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করেছি। আশা করি, আমি ন্যায়বিচার পাব।’