• শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:১৭ অপরাহ্ন

বিএনপির মদদ ও জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পনায় ধ্বংসংযজ্ঞ : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিনিধি / ৪৬
বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের জানমাল রক্ষায় কারফিউ দিতে বাধ্য হয়েছি। বিএনপির প্রত্যক্ষ মদদে এবং জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পনায় এসব ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। এই সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে এটাকে দমন ও প্রতিহত করব।

সোমবার (২২ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।

শেখ হাসিনা বলেন, যতগুলো আইকনিক স্থাপনা তৈরি করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছিলাম, হামলা চালিয়ে তা সুপরিকল্পিতভাবে নষ্ট করা হয়েছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমরা যত উন্নয়ন করেছিলাম, তা তারা ধ্বংস করতে চেয়েছে। কারা এসব ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তা সবার কাছে পরিষ্কার। শিবির-জামায়াত তো জঙ্গি সংগঠন। আর বিএনপির চেহারা এবার স্পষ্ট হয়েছে। এদের এবার সহজে ছাড় দেওয়া হবে না। নাশকতাকারীদের দমন করে দেশের পরিবেশ স্বাভাবিক করব, ইনশাআল্লাহ।

মেট্রোরেল, সেতু ভবন, ডাটা সেন্টার, এক্সপ্রেসওয়েসহ গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কঠোর সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত এক পলাতক আসামির হুকুমে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির এক হয়ে এসব হামলা চালিয়েছে। পূর্বপরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের ঢাকায় জড়ো করে, ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তারা এসব ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকার কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়েছে। এসব জঙ্গিকে শক্ত হাতে দমন করে দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। পরিবেশ স্বাভাবিক হলে বিশেষ ব্যবস্থা শিথিল করে আনা হবে।

‘এই ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড়া হবে না। এখন মনে হচ্ছে, জামায়াত-শিবির দীর্ঘদিন থেকেই পরিকল্পনা করেছে। আর বিএনপি তাতে সম্পূর্ণ মদদ দিয়েছে। তারা যে এতকিছু করছে, এর জন্য অর্থ সরবরাহ কারা করছে? পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিবির-জামায়াত ও বিএনপির আগুনসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’ হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বসে নেই। আমাদের চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যেখানে যতটুকু করার দরকার, আমরা সেটুকু করব। আমরা চাই দ্রুত এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে। এরই মধ্যে আমরা পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত করতে পেরেছি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে বিএনপি-জামায়াত ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যারা আন্দোলন করেছে, তাদের কথা আমরা ধৈর্য সহকারে শুনেছি। তাদের দাবি পূরণ করেছি। শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছেন। এর পরও সহিংসতা-নাশকতা কেন? কী উদ্দেশ্যে এসব করা হচ্ছে? কারা অর্থায়ন করছে। যারা এসব করছে, তাদের কাউকেই ছাড়া হবে না। অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আন্দোলনে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির প্রকৃত চেহারা জাতির সামনে প্রকাশ হয়ে গেছে। জঙ্গি দমন করেই দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে। ২০১৩-১৪ সালে যারা আগুনসন্ত্রাস করেছে তাদের অনেককেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আগুনসন্ত্রাসীরা জেল থেকে বেরিয়ে আবারও একই কাজ করছে। এবার এত সহজে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

শিবির জঙ্গি, জামায়াত জঙ্গি ও বিএনপির চেহারাও বেরিয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনো ওরা (বিএনপি) হুকুম দেয় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। এই মুহূর্তে জঙ্গি দমন করা ও ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে—এসব গুজবের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা কখনো পালায় না। ’৭৫-এর পর ছয় বছর দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। রিফিউজি হিসেবে কাটিয়েছি। ’৮১ সালে (দেশে যখন যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় ছিল) দেশে ফিরে এসেছি, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দিয়েছিল। তা মোকাবিলা করতে দেশে আসতে চাওয়ায় আমাকে নানাভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্পেন ও ব্রাজিল সফর বাতিল করেছি। কারণ এ সময় দেশের জনগণের পাশে আমি থাকব।

বিদেশে অনেক আজেবাজে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতা বা পদ আমার কাছে কিছু না। আমি জাতির পিতার কন্যা; ক্ষমতায় আছি দেশের উন্নতি করতে, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে।

১৫ বছর আগে দেশের অবস্থা কী ছিল আর এখন কী হয়েছে তা বিবেচনা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশকে আজ বদলে দিয়েছি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। যখন সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছি, ঠিক তখন আমরা যেসব উন্নয়ন করেছি সব জায়গায় হামলা করে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে।

ইন্টারনেট চালু প্রসঙ্গে বলেন, এই সেবা দ্রুত স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চলছে। হামলাকারীদের আগুনে ডাটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্তসহ ইন্টারনেট কেবল ও অপটিক ফাইবার পুড়ে গেছে।

ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ডেকেছি, কারণ আপনাদের সহযোগিতা দরকার। আমার দিক থেকে সব ধরনের সহযোগিতা আপনারা পাবেন। যারা আগুন দিয়েছে, পুড়িয়ে জনগণের জানমাল ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করেছে সেসব বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সরব হওয়ারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন