বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করে অবিলম্বে সরকারপ্রধানকে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। সরকারের পদত্যাগ ছাড়াও মঞ্চের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডসহ সামগ্রিক ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তে ছয় দফা দাবি তুলে ধরে অবিলম্বে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।
অন্য দাবিগুলো হচ্ছে- দ্রুত কারফিউ প্রত্যাহার করে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবিসহ বিশেষ বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া; ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু, গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ প্রত্যাহার; আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উপরে গুলি, হত্যার পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও বাস্তবায়কারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা; গ্রেপ্তার বিরোধী নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তি; তুলে নেওয়া আন্দোলনকারী নেতাদের মুক্তি ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু; ঢাকাসহ সারা দেশে ব্লক রেইড বন্ধ করাসহ শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবি।
সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের নেতা ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এসব দাবি জানান।
তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের একটি ন্যায্য আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পথে না গিয়ে সরকার ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডসহ নাশকতার যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে এর সমুদয় দায়-দায়িত্ব সরকার ও সরকারি দলের। আমরা সরকারকে জনগণের জান-মালের এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির দায়-দায়িত্ব নিয়ে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগ করার আহ্বান জানাই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সরকার হত্যা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন-নিপীড়ন, মিথ্যা প্রচারের যে পথে হাঁটছে এই পথে এ সংকটের সমাধান নেই। সংকট উত্তরণে সরকারকে রাজনৈতিক সমাধানের পথ বেছে নিতে হবে। তা না হলে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষায় সরকারকে বিদায় দেওয়া ছাড়া দেশের মানুষের নিজেদের রক্ষার আর কোনো উপায় থাকবে না।
সাইফুল হক বলেন, সরকার ও সরকারি দলের যাবতীয় উসকানি এবং নাশকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা এড়িয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ছয় দফার জনদাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে গণআন্দোলন এগিয়ে নেবে। আমরা দেশের সব গণতন্ত্রকামী ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও শ্রেণি-পেশার সংগঠন এবং মুক্তিকামী দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই আন্দোলন এগিয়ে নিতে উদাত্ত আহ্বান জানাই।
সাইফুল হক অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নজিরবিহীন নৃসংশতায় দমন করতে গিয়ে তারা (সরকার) যে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে, তাকে আড়াল করতে কথিত ইন্ধন ও নাশকতার অজুহাতে এখন সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিরোধী দলকে দমনের অভিযান চলছে। সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের পথে না গিয়ে কারফিউর ছত্রছায়ায় বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযানের নামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতি দেশকে ভয়াবহ বিপর্যস্ত ও গভীর অনিশ্চয়তায় নিক্ষেপ করেছে।
তিনি বলেন, সরকার যেভাবে শুধু বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এই গণআন্দোলন দমন করতে চেয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে যে, জনগণের ভেতরে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বলতে আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। সরকার ও সরকারি দল কার্যত জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমরা জানি, ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে- জাগ্রত জনতার সামনে রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ চিরকালই পরাজিত হয়েছে, শেষ পর্যন্ত জনগণের বিজয় হয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা বলেন, সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন যেভাবে দমনের চেষ্টা চালিয়েছে তার বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার-নিপীড়ন করা হচ্ছে, রিমান্ডে নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক নুরকে নির্যাতন করা হয়েছে, কোটা আন্দোলনের পাঁচ সমন্বয়কারীকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন ও জোর করে আন্দোলনের সমাপ্তি টানার ঘোষণা দেওয়ানো হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড ও নির্মমতার নিন্দা জানাই।
সাইফুল হক জানান, গতকাল (রোববার) পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজার বিরোধী নেতাকর্মী-শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ১৯ জুলাই গণতন্ত্র মঞ্চের মিছিলে পুলিশি হামলার ঘটনায় মঞ্চের সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ নেতারা গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেন সাইফুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ইমরান ইমন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, একেএম জামির, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আবু ইউসুফ সেলিম, বাবুল বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।