ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মইলাকান্দা ইউনিয়নের পূর্ব কাউরাট গ্রামের মোহাম্মদ আনোয়ার উদ্দিনের ছেলে জুবায়ের আহমেদ। পেশায় মোবাইল পার্টসের ব্যবসায়ী। দোকানে যাওয়ার পথে গত ২০ জুলাই ময়মনসিংহের গৌরীপুরে কলতাপাড়া বাজারে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জুবায়ের আহমেদ। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম।
আমার ছেলে মোবাইল পার্টসের ব্যবসা করত। দোকানে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেল। তার তো কোনো অপরাধ ছিল না। নিজের ছেলের জানাজা নিজের পড়াতে হবে এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন জুবায়েরের বৃদ্ধ বাবা মোহাম্মদ আনোয়ার উদ্দিন।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ বাজারে দোকান ভাড়া নিয়ে মোবাইল পার্টসের ব্যবসা করতেন জুবায়ের। প্রতিদিন বাড়ি থেকেই দোকানে যাতায়াত করতেন তিনি। সহিংসতা শুরু হলে মা নূরজাহান বেগম ছেলেকে দোকান খুলতে নিষেধ করেন। মায়ের কথা মেনে ১৮ ও ১৯ জুলাই দোকান বন্ধও রাখেন জুবায়ের।
কিন্ত ২০ জুলাই দোকানে যাওয়ার পথেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। ওইদিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জুবায়ের মরদেহ বাড়িতে এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত জুবায়েরের বৃদ্ধ বাবা নিজেই ছেলের জানাজা পড়ান।
জুবায়েরের বাবা আনোয়ার উদ্দিন বলেন, শোকেরও তো একটা ধরন আছে, এটা কোনো ধরনের শোক। পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ সবচেয়ে ভারী, কতটা ভারী, কতটা কষ্টের বলে বুঝাতে পারব না। নিজের ছেলের জানাজা নিজের পড়াতে হবে এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। সৃষ্টিকর্তা ছেলেকে যেন শহিদি মর্যাদা দান করে জান্নাতবাসী করেন এটাই প্রার্থনা করি। ছেলের মৃত্যুতে আইনি পদক্ষেপে নেব না। তবে ছেলে হারানোর বিচারটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়ে রাখলাম।
তিনি বলেন, গত বছরের ২৩ জুন আমার ছেলে জুবায়েরের সঙ্গে বিয়ে হয় রামগোপালপুর ইউনিয়নের মার্জিনার। স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই শোকে পাথর হয়ে আছে ছেলের বউ। শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় মার্জিনার বাবা তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
জুবায়েরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো বাড়িজুড়ে সুনসান নীরবতা। ছেলের কক্ষে বসে কান্নাকাটি করছেন জুবায়েরের বাবা। আর ছেলে হারানোর শোকে নির্বাক হয়ে গেছেন মা। কারো সঙ্গে কথা বলছেন না তিনি। ছেলের কথা উঠতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন।
জুবায়েরের মা নুরজাহান বেগম বলেন, ঘটনার দিন আমি মাছ ও ভাত রান্না করে খাবার টেবিলে রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ি। জুবায়ের খাওয়া শেষে করে বলে মা তোমার কথায় দেশের গণ্ডগোলের জন্য দুদিন ধরে দোকান বন্ধ রাখছি। আজ একটু দোকানটা দেখে আসি। এ বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল, ফিরে এলো লাশ হয়ে। আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করত না। আন্দোলনেও জড়িত ছিল না। কেন তাকে গুলি করে মারা হলো?
জুবায়েরের ছোট ভাই মো. কাউসার বলেন, ভাইয়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার ঘণ্টাখানেক পর আমরা স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মরদেহ বাড়িতে আনার পর দেখতে পাই ভাইয়ার বুকের বাম পাশে গুলির ছিদ্র ছিল। তার আয়েই চলতো সংসার ও আমাদের দুই ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ। এখন আমাদের কি হবে।