• মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৫ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে এমনটি কেন?

মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন
মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন / ৮৯
বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪
ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি : সংগৃহীত
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

দুনিয়ার বহু দেশে আন্দোলন হয়, বিক্ষোভ হয়। তখন সময় সময় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে, জেলে পাঠায় । কিন্তু কোথাও এত লোক মারা যায় না, কোথাও এতসব সরকারি-বেসরকারি জানমাল, গাড়ি-বাড়ি জ্বালাও-পোড়াও হয় না, অফিস আদালত ধ্বংস হয় না। আমাদের দেশে এমনটি হয় কেন? আমাদের দেশের প্রতি কী কোনো ভালোবাসা বা টান নেই?

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাটি বড়ই দুঃখজনক। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। সরকার চায় কোটা পদ্ধতির সংস্কার। ছাত্রসমাজ ও তাই চায়। উভয়ের নীতিগত অবস্থান এক ও অভিন্ন। তাহলে এত গোলাগুলি, এত রক্তক্ষয়, এত সম্পদ, এত গাড়ি-বাড়ি, এত অফিস আদালত, মেট্রোরেল, ডাটা সেন্টার, হাসপাতাল, ইত্যাদি ধ্বংস করে কার লাভ? দেশের ক্ষতি, জনগণের ক্ষতি এবং এ ক্ষতি পোষাতে অনেক অনেক মূল্য দিতে হবে। অনেক মা-বাবার স্বপ্ন ছেলেমেয়ে বড় হয়ে মানুষ হবে, দেশের সম্পদ হবে, দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে এবং দেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। কিন্তু কীসে কী হলো?

আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলার প্রকল্প হাতে নিয়েছি তবে বিনা কারণে এমন মৃত্যু ও ধ্বংস কিসের আলামত? ছেলেমেয়েদের জেল জুলুম দিয়ে মানুষের দুঃখ ও ক্ষোভ কি কমানো যাবে?

সারা বিশ্বজুড়ে আমরা বদনামের ভাগি হলাম, সবাই তাজ্জব এমনটি কেনো হলো। সম্প্রতি আমি লাওসে ‘আসিয়ান ও এশিয়ান রিজিওন্যাল ফোরামে’ (ARF) বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করি। সেখানে বড় বড় দেশের প্রায় দেড় ডজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেন। বাংলাদেশ তো উন্নয়নের রোল মডেল, স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্টলি তারা ছাত্র আন্দোলন দমন করতে পারলেন না কেন? এমনটি হলো কেন?

আমাদের ট্রাম্প কার্ড হচ্ছে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এবারে কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলনে আমাদের অর্থনীতিও বড় ধাক্কা খেল। সবাই প্রশ্ন করছে তবে কি এই উন্নয়ন মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনে নাই। কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ কি তাদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ও হয়রানির বহিঃপ্রকাশ ঘটাল? দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, রন্ধে রন্ধে দুর্নীতি, প্রতিটি কাজে আমলাতান্ত্রিক হয়রানি, ব্যাংকিং ক্ষেত্রে অব্যাবস্থা, লুটপাট, কর্মসংস্থানের অভাব, বিদেশে সম্পদ ও টাকা পাচার, পুলিশের হয়রানি ও সামাজিক বৈষম্য, জবাবদিহিতার অভাব ইত্যাদি মানুষের জীবনকে কি করে তুলেছে দূর্বিষহ? তাই এত উন্নয়নের পরও, এতগুলো মেগা প্রোজেক্ট সম্পূর্ণ হওয়ার পরও মানুষের মনে অশান্তি, ক্ষোভ ও অস্থিরতা।

জামায়াত-শিবির-বিএনপি সুযোগের অপেক্ষায় অবশ্যই থাকবে। তবে তাদের এ সুযোগ আমরা কেনো দিলাম? বস্তূত: সিদ্ধান্তে সময় ক্ষেপণ ও ঠেলাঠেলি এবং অতিকথন জনগণ পছন্দ করেছে বলে মনে হয় না ।

এখন জাতি ও নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন দোষারোপের মন মানসিকতা পরিহার করে খোলামনে আত্ম উপলব্ধি, আত্মবিশ্লেষণ এবং সেই মতে উদ্যোগ নেওয়া। তাহলেই আমরা এই দুঃখজনক ও অকল্পনীয় বিস্ফোরণের কারণ যেমন জানতে পারব, সঠিক সিদ্ধান্তও নিতে পারবো। জাতি ও নেতৃত্বের জন্য এ এক বড় চ্যালেঞ্জ।

তবে আমরা ভাগ্যবান আমরা এক জনমণপন নেত্রী পেয়েছি যিনি সকল প্রলোভন, সকল ভয়ভীতি, সকল হিংসা-বিদ্বেষ, সকল চাপের মুখে মানুষের মঙ্গলের জন্য নিবেদিত। তবে সঠিক তথ্য, (বাহবা পাওয়ার তথ্য নয়) ও সঠিক সুপারিশ গ্রহণের জন্য প্রয়োজন জনগণের সাথে আরও অধিকতর সংপ্রিক্ততা ও যোগাযোগ বাড়ানো।

আমাদের এতসব গোয়েন্দা সংস্থা আছে এবং স্বাভাবিকভাবেই এত বড় ধ্বংসযজ্ঞ হবে, জ্বালাও-পোড়াও হবে তার কিছুই কি তারা টের পায়নি? কেনো? যারা মারা গেছে বা আহত হয়েছে তাদের ভালোমন্দ দেখভাল করা আমাদের দায়িত্ব এবং বিশেষ করে সারা দেশে স্কুল-কলেজ, ও সামাজিক মাধ্যমে দেশের সম্পদ যাতে আগামীতে কেউ ধ্বংস না করে তার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালু করা একান্ত আবশ্যক বলে মনে করি।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক প্রতিদিন খবর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক প্রতিদিন খবর কর্তৃপক্ষের নয়। ]


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন