পুলিশের বাঁধায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) 'রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ' কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি পালনের জন্য অবস্থান নিলে পুলিশ সদস্যরা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টেনেহিঁচড়ে আটকের চেষ্টা করে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের পরেও দুইজনকে আটক করে। এই অবস্থায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় দায়িত্ব পালনকালে দুইজন সাংবাদিককেও হেনস্তা করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মৌনমিছিলে সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করেছিল। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে তাদের পৃথক কর্মসূচি পালনের জন্য শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয় তারা। কিন্তু পুলিশ তাদের ওপর হামলা করে। টেনেহিঁচড়ে অনেককে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের কারণে সবাইকে নিয়ে যেতে না পারলেও দুইজনকে আটক করে নিয়ে গেছে। স্বাধীন দেশে কথা বলা তাদের মৌলিক অধিকার। তারা 'এই বর্বরতার বিচার, আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও ছাত্র হত্যার বিচার চায়।
জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা 'রিমেমবারিং আওয়ার হিরোস' কর্মসূচি পালনের জন্য অবস্থান নেন। তখন পুলিশ বাধা দিলে কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন প্রাচীর টপকে ক্যাম্পাসে ঢোকেন স্কুল-কলেজের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী। পরে শহিদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মৌন মিছিলে যোগ দেন তারা। মিছিল শেষে চলে যাওয়ার আগ-মুহুর্তে হঠাৎ ইউনিফর্ম ছাড়া কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য শিক্ষার্থীদের টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেন। তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেন এবং ছাড়িয়ে আনেন।
এ সময় ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের উপরও চড়াও হন পুলিশ। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের বিভাগীয় প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন ও সমকাল পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি অর্পন ধরকে মারধর ও তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আমজাদ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থী আটকের লাইভ চলাকালে পুলিশ আমার উপর চড়াও হয় এবং মোবাইল কেড়ে নেন নিয়ে কিল-ঘুষি মারেন এবং আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন।
অর্পণ ধর বলেন, আমার ঘাড় চেপে ধরে তুলে নেয়ার চেষ্টা করা হয়৷ সাংবাদিক কার্ড দেখিয়ে পরিচয় দিলে আমাকে গোপন সোর্স বলে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে সাদা পোশাকধারী একজন। পরে ঊর্ধ্বতন একজন পুলিশ এসে আমাকে রক্ষা করে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানান শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এ ব্যাপারে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন বলেন, শিক্ষার্থীদের চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কারা এরা? আমরা জবাব চাই। এটা কোন ফোর্স? এটা কি কোন বৈধ বাহিনী? এটা কোনো বৈধ সরকারের আচরণ হতে পারে? দেশে তো সামরিক আইন জারি হয়নি। সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল, তারা এটা করতে নিষেধও করেছে। কিন্তু এই সাদা পোশাকধারী এরা কারা? দিনে দুপুরে একটা ছেলেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে! গণতান্ত্রিক এই দেশে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলার অধিকারতো আছে। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, দেশে একটা নির্মম হত্যাকাণ্ড হয়ে গেছে। এটার দায় সরকার ও সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর। এখনো যে তামাশা হচ্ছে, সেটাও অন্যায়। সরকার রাজনৈতিক কোনো সমাধান করছে না। এগুলো চক্রান্ত বলে হাজার হাজার মানুষের মুখ বন্ধ করা যাবে না।