• সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০১:২১ পূর্বাহ্ন

জাবির হল খুলে দিতে আলটিমেটাম, প্রশাসনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা

মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন
মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন / ৫৮
শনিবার, ৩ অগাস্ট, ২০২৪
বিক্ষোভ মিছিলে আন্দোলনকারী ও শিক্ষকরা। ছবি : প্রতিদিন খবর
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থী লিওনসহ সব শিক্ষার্থীকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি এবং ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এ সময় অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার ঘটনায় প্রশাসনের নীরব ভূমিকার প্রতিবাদে বর্তমান প্রশাসনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকসমাজ।

শনিবার (৩ আগট) দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ শুরু করেন তারা। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিসেবার বাহনগুলো অবরোধের আওতামুক্ত ছিল।

পরে দুপুর ২টায় অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। এরপর অবরোধস্থল থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে জয়বাংলা ফটক (প্রান্তিক গেট) দিয়ে ভেতরে ঢোকেন তারা। মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবন হয়ে পুরোনো ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহতদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে যায়। পরে সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর সেখান থেকে আবার মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

এর আগে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদ ভবন সংলগ্ন মহুয়া মঞ্চের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, আরিফ সোহেল ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী লিওনসহ সব শিক্ষার্থীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেওয়া না হলে এবং আজকের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায় না হলে কাল থেকে অসহযোগ আন্দোলনে যাবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হলগুলো খুলে না দেয় তবে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই তাদের করণীয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, যতদিন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত না করা হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা শিক্ষকরা চুপ থাকতে পারি না। গতকালও উত্তরা, খুলনা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি গুলি করা হয়েছে। দেশের সব মানুষকে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর আহ্বান জানাব, আপনারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে সোচ্চার হোন। আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হয়েছে এটা বন্ধ করার জন্য তৎপর হোন।

এদিকে বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাজের ব্যানারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন শিক্ষকরা।

গত ১৫ জুলাই রাতে প্রশাসনের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ ঘোষণা দিয়ে ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা। দাবিগুলো হলো- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করা, হল থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী মুক্ত করতে হবে। উপাচার্য, প্রো-উপাচার্য, ট্রেজারার ও প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে।

গত ১৫ জুলাই রাতে বহিরাগত সন্ত্রাসী ও ছাত্রলীগ কর্মীর যারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নৃশংসভাবে আঘাত করেছে তাদের বিচার করতে হবে। অনতিবিলম্বে আরিফ সোহেল ও সাব্বির রহমান লিয়নসহ অন্যায্যভাবে গ্রেপ্তার হওয়া সব রাজবন্দিদের মুক্তি দিয়ে সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলি বলেন, আমরা এর আগেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছি। এবারও শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির পক্ষে দাঁড়িয়েছি। গত ১৫ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় প্রশাসনের নীরব ভূমিকার প্রতিবাদে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি।


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন