কুমিল্লার দেবীদ্বারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের হামলায় আহত হয় আবু বকর (১৬) নামের এক কিশোর। তাকে বাঁচাতে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটছেন পরিবারের সদস্যরা।
সর্বশেষ শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে তাকে কুমিল্লা থেকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত আবু বকর কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার শাকতলা গ্রামের মোল্লা বাড়ির কৃষক আবুল খায়েরের ছোট ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে আবু বকর সবার ছোট।
আবু বকরের বড় ভাই মোহাম্মদ আলী একজন গাড়িচালক। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট দেবীদ্বারে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের তুমুল উত্তেজনা চলছিল। তিনি সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আবু বকরকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু সে কথা শোনেনি। বন্ধুদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেবীদ্বার নিউমার্কেটের সামনে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ধাওয়ার মুখে পড়ে আবু বকর। তাকে কয়েকজন মিলে লাঠি, ধারালো অস্ত্র ও রড দিয়ে বেধড়ক পেটায়। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে আবু বকর। তার মাথা ও শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাকে একজন ফোন দেয়। আমাকে জানায় আবু বকরকে কারা যেন খুব মারছে। দৌড়ে দেবীদ্বার নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখি গোলাগুলি হচ্ছে। সামনে এগোলে আমিও গুলিবিদ্ধ হব, এমন অবস্থা হয়েছে। একজন লোককে ফোন দিয়ে বললাম আমার ছোট ভাইকে একটা সিএনজি দিয়ে যেন সামনে এগিয়ে দেয়। এরপর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আবু বকরকে তুলে প্রথমে কুমিল্লার কাবিলা এলাকায় ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, কুমিল্লা মেডিকেলে থাকার সময়ই আবু বকরের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু ওই সময় রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি ভালো না থাকায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই।
এরপর ১০ আগস্ট কুমিল্লা নগরীর কুমিল্লা ট্রমা (প্রা.) হাসপাতালের আইসিইউতে আবু বকরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। শুক্রবার দুপুরে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আবু বকরের স্বজন ও সহপাঠীরা আইসিইউর সামনে বসে আছেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন জানানোর পর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে হাসপাতালের লাইফ সাপোর্ট থেকে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালটির চেয়ারম্যান চিকিৎসক আবদুল হক বলেন, আইসিইউতে থাকা ওই কিশোরের মাথায় সবচেয়ে বেশি আঘাত লেগেছে। তার মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ অবস্থা থেকে রোগী ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। তাকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাকে ঢাকার নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে পাঠানো হয়।