পর্ব-০১
বিশেষ প্রতিনিধি, খুলনাঃ
ভাড়ার ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালই । সরকারি ঘরে এসে আমাদের কষ্টের সীমা নেই। এক বছর না যেতেই চালের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ছে। জানালা দরজা খুলে যাচ্ছে, ধ্বসে পড়ছে ঘরের দেয়ালের পলেস্তারা। চলাচলের রাস্তাও পানিতে নিমজ্জিত। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় চলতি বর্ষা মৌসুমে ঘরের সাথে নির্মান করা বাথরুমের পানি উপচে একাকার হচ্ছে ঘরের মেঝে। বাথরুমের পোকা ঘরে কিলবিল করছে। ফলে উক্ত ঘর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে উপহার পাওয়া ঘরের বাসিন্দাদের সাথে আলাপকালে মিলেছে এমন তথ্য। সরেজমিন পরিদর্শনে এর সত্যতাও মিলেছে।
এদিকে মুজববর্ষের ঘর প্রদানের ৫ম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ফকিরহাট উপজেলায় ১৫০ টি ঘর বরাদ্দ হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের গত ১১ জুন অনেকটা ঢাক ঢোল পিটিয়ে জুম কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের সাথে ফকিরহাটের এসব ঘরেরও উদ্বোধন করেন। অথচ অদ্যাবধি এ ঘরগুলো ভুমিহিনদের কাছে হস্তান্তর করতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। নির্মানাধীন এসব ঘর নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। স্থানীয়দের মতে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে যেনতেন ভাবে এসব ঘর নির্মান করা হচ্ছে। এর মধ্যে উপজেলার পাগলা এলাকায় নির্মানাধীন অর্ধশত ঘর নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। সিডিউল অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়নি সিমেন্ট বালু রড। আর বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানে কাঠ। যার স্থায়ীত্ব নিয়ে সন্দিহান এলাকাবাসী। তারা বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তবে পিআইও দপ্তর বা উপজেলা প্রশাসন ঘর নির্মানে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিস্তারিত কোন তথ্য দিতে বা এর দ্বায় নিতে চাচ্ছে না। তবে এলাকার সচেতন মহলের মতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঘর প্রদান কর্মসুচির শুরু থেকে এ পর্যন্ত একাধিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার দায়িত্ব পালন করেছে। আর যখন যে এসেছে তখন সে এ প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যে কারনে এ উপজেলার ঘরগুলোর মান এতো নিম্ন।
উল্লেখ্য সরকার মুজিবর্ষ উপলক্ষে ফকিরহাট উপজেলায় ৬৯০ টি ভুমিহীন পরিবারের মাঝে জমিসহ ঘর বরাদ্দ দেয়। যার মধ্যে সর্বশেষ ৫ম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ১৫০ টি ঘর বরাদ্দ হয়। চলতি বছরের ১১ জুন অনেকটা ঢাক ঢোল পিটিয়ে ভিডিও বনফারেন্সের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের ন্যায় এ উপজেলাও ঘরগুলো উদ্বোধন করেন। অথচ অদ্যবধি ঘরগুলোন নির্মানকাজও সম্পন্ন করতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। ভুমিহীনদের মাঝে জমিসহ ঘরের চাবি হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করলেও কবে নাগাদ এ ঘরে তারা বসবাস করতে পারবে এ নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তায়।
এদিকে যেসব ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে সেখানকার বসবাসরত পরিবারগুলো পড়েছেন চরম বিপাকে। কারন এসব ঘরের নির্মান কাজ এতো নিম্নমানের যে বছর না ঘুরতেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি সরেজমিন কথা হয় উজেলার নলধা মৌভোগ প্রকল্পে বসবাসকারীদের সাথে। তারা প্রতিবেদককে জানান এখানে ৫০ টি ঘরের মধ্যে প্রায় সবগুলো ঘর থেকেই বৃষ্টির পানি পড়ে। ঘরের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টি আসলে ছেলে মেয়ে নিয়ে একপাশে বসে থাকতে হয়। ঘরের মধ্যে কাঠের আড়ার সাথে ফ্যান ঝোলাতে ভয় লাগে কখন যেনো ভেঙে পড়ে। বাথরুমের পানি ও ময়লা ঘরের মেঝেতে উঠে যায় সেই সাথে বাথরুমের পোকা। পলেস্তার উঠে যাচ্ছে ঘরগুলোর। জানালা দরজা ভেঙে পড়ছে। রাস্তা না থাকায় ভ্যান নিয়ে দূরের পাকা রাস্তার মাথায় রাত কাটাতে হয়। সরকারের বরাদ্দ এই ঘরগুলোর জন্য ৩ লক্ষ ৫ হাজার টাকা থাকলেও দেড় লক্ষ টাকাও একটি ঘর নির্মানে খরচ করেনি। কর্মকর্তারা যোগসাজসে লুটপাট করেছে সরকারি বরাদ্দ। এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাঈদা দিলরুবার সাথে একাধিকবার সাক্ষাতে তথ্য উপাত্ত চাইলেও তিনি কোনো তথ্য উপাত্ত দিতে রাজি নন। এছাড়া এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান এগুলো আমার পূর্বতন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সময় নির্মিত। লিখিত কোন অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা যাবে। ফকিরহাট উপজেলার স্বৈরশাসক হাসিনার আমলের ফ্যাসিস্ট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন দাশের ছত্রছায়ায় ও যোগসাজসে বিভিন্ন কর্মকর্তারা লুটপাট করেছে শত কোটি টাকা এমন অভিযোগ আছে বিভিন্ন মহলে। চলমান.............