সমন্বয়ে চান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
কাইয়ুম খান, খুলনা ।
খুলনা জেলার ৯টি উপজেলায় ও সদরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমন্বয় না থাকায় প্রতিবছর জলাবদ্ধতা, লবণ পানির প্রবেশ ও ভেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন মৌসুমে নষ্ট হচ্ছে শত কোটি টাকার ফসল। সরেজমিন তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায় কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এছাড়া রূপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়া, ফুলতলা,খুলনা সদরেও রয়েছে জলাবদ্ধতা ও পানি নিষ্কাশনের ব্যাপক সমস্যা। কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায় চিংড়ি ঘেরে পানি ঢুকানোর জন্য বেড়িবাঁধের তলদেশ থেকে বড় বড় নালা তৈরি করে স্থানীয় প্রভাবশালী মৎস্য চাষিরা এবং প্রতি কিলোমিটার ভেড়ীবাঁধের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ টি নালা থাকে। এছাড়া স্লুইচগেটগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে উঠা নামানোর ফলে অনেক সময় লবণ পানি পুরো ফসলের জমিতে প্রবেশ করে। এতে করে প্রচুর পরিমাণ ফসল বিনষ্ট হয়। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ লোকসানের মুখে পড়ছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে নদীর পানির চাপ বেড়ে নালা কাটার ফলে ভেড়ীবাঁধের দুর্বল অংশ ভেঙে যায় এবং প্লাবিত হয় শত শত একর জমির ফসল, এমন অভিযোগ এসকল উপজেলার কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের।
জেলার অন্যান্য উপজেলা সমূহে একইভাবে গেটের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই কৃষক ও কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। এ বিষয়ে বিভিন্ন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাগন জানান স্লুইচগেট একশ্রেণীর প্রভাবশালী মানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকে । একইভাবে বিভিন্ন মৎস্যজীবী সমিতির নামে নামমাত্র মূল্যে প্রভাবশালীরা বিভিন্ন সরকারি খাল ইজারা নিয়ে আসে। তারা অধিক মুনাফার জন্য কৃষক ও কৃষির বিষয় চিন্তা না করে ইচ্ছামতো লবণ পানি প্রবেশ করায় খালে। খাল থেকে বিভিন্ন ফসলের জমিতে লবণ পানি একাকার হয়ে যায় । ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকেরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কৃষি বিপ্লবের অগ্রযাত্রায় এটি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা ।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন এ সকল কারণে প্রতিবছর এ জেলায় শত কোটি টাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে ।বিভিন্ন সময় আমি অভিযোগ পেয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। যদি উপজেলা পর্যায়ে স্লুইচগেট নিয়ন্ত্রণে আমাদের ইউনিয়ন উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করা যায় এবং সরকারিভাবে খালে ইজারা বন্ধ করা যায় তাহলে খুলনার কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য আনা সম্ভব। এছাড়া বিভিন্ন নদী ও খালের নাব্যতা, খনন ও সংস্কারের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে হবে । আমরা জেলা কৃষি অধিদপ্তর খুলনার পক্ষ থেকে নদী খালের খনন ও সংস্কারের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি । আশা করছি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা এর নির্বাহী প্রকৌশলী (সার্কেল -১)আব্দুর রহমান তাযকিয়া সার্বিক বিষয় বলেন উপজেলা পর্যায়ে কৃষি অধিদপ্তর সাথে আমাদের সমন্বয়ে রয়েছে । প্রত্যেক উপজেলায় সমন্বয় কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মৎস ও কৃষি কর্মকর্তারা ওই কমিটির সদস্য পানি নিষ্কাশনে অথবা জলাবদ্ধতায় কৃত্রিম সংকট তৈরি হলে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সমাধান না হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব । একই কথা বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা নির্বাহী প্রকৌশলী (সার্কেল -২) মোঃ আশরাফুল আলম।
এই দুই দপ্তরের মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়হীনতার বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলামের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান,বিষয়টি আমার জানা নাই, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাসিক মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন করলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে