• বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন

কাঠে পুড়ানো ইটের কারনে কয়লায় পুড়ানো ইটের বাজারে ধস, দুশ্চিন্তায় জিগজাগ ইট ভাটা ব্যবসায়ীরা।

HM Hakim / ৩৬
বুধবার, ৫ মার্চ, ২০২৫
Oplus_131072
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

 

আঃ হাকিম, বিশেষ প্রতিনিধি,খুলনা।

এবছর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নবায়নে বাড়তি সতর্কতা থাকলেও বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জে আশ্রয়ন প্রকল্পের ভিতরে মোড়লগঞ্জ ব্রিকস পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র।

খুলনা বিভাগে কাঠে পুড়ানো ইটের কারণে কয়লায় পুড়ানো ইটের বাজারে ধস । একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়,খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদাহ, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, মাগুরা ও সাতক্ষীরার একাংশ প্রায় ৮০ শতাংশ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টন কাঠ। এ সকল জেলায় প্রায় ৪০ শতাংশ ইটভাটায় স্থাপন করা হয়েছে কাঠ কাটার জন্য করাত কল । ফলে যেখানে কয়লায় পুড়ানো ইট ১ হাজার বিক্রি হচ্ছে ১০ হাজার টাকায়, সেখানে কাঠের পুড়ানো ইট বিক্রি হচ্ছে ১হাজার ৮ হাজার টাকায়। জিগজাগ ভাটার কয়লায় পুড়ানো ইট, কাঠে পুড়ানো ইটের চেয়ে উৎপাদন খরচ প্রায় ২ হাজার টাকা প্রতি হাজারে বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় মুখ থুবড়ে পড়ছে জিগজাগ ভাটার মালিকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু জিগজাগ ভাটার মালিকরা বলেন, প্রতিবছর একটি বৈধ ইটভাটার কাগজপত্র নবায়নে তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়। কিন্তু অবৈধ ইটভাটার মালিকরা পেছনের দরজা থেকে দেড় লক্ষ টাকা খরচ করলেই অদৃশ্য ভাবে সবকিছু ম্যানেজ হয়ে যায়। বর্তমানে বৈধ ইটভাটা পরিচালনায় বেশি কষ্টসাধ্য। আবার বিভিন্ন প্রশাসনের বৈধ ইটভাটার প্রতি চাপ বেশি থাকে, ফলে প্রতি বছর জিগজাগ ভাটার মালিকরা বিভিন্নভাবে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ছে। তারা আরও বলেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও খুলনা বিভাগে তেমন কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় সূত্রে জানা যায় এ বিভাগে মোট ১০৯৮টি ইটভাটার মধ্যে ৭৯০ টি অবৈধ। এরমধ্য খুলনায় বৈধ ১০১ টি, অবৈধ ৪৫ টি বাগেরহাটে বৈধ ২৬ টি, অবৈধ ৩ টি সাতক্ষীরায় বৈধ ৫৪ টি, অবৈধ ৮৬ টি যশোরে বৈধ ৪৯ টি, অবৈধ ১১০ টি ঝিনাইদাহে বৈধ ৯ টি, অবৈধ ১১৬ টি মাগুরায় বৈধ ৪ টি, অবৈধ ৬৯টি নড়াইলে বৈধ ১৭ টি, অবৈধ ৩১টি কুষ্টিয়ায় বৈধ ২১ টি, অবৈধ ১৬৩ টি চুয়াডাঙ্গায় বৈধ ২৬ টি, অবৈধ ৬৭টি মেহেরপুরে বৈধ ১ টি, অবৈধ ১০০টি। বেশিরভাগ অবৈধ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লার পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে,কাঠ, বাশের মুথা, টায়ারের কালি, প্লাস্টিকের বর্জ্য, তুষকাঠ ও মেলামাইন বর্জ্য ইত্যাদি। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ইটভাটা মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ -সভাপতি আরজ আলী খান মান্নু বলেন, কাঠে পুড়ানো ইট ভাটার কারণে, কয়লায় পুড়ানো জিগজাগ ভাটার ইটের দাম কমে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রতি হাজার ইট উৎপাদনে কাঠের তুলনায় কয়লায় দুই হাজার টাকা বেশি খরচ হয়। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না জিগজাগ ভাটার উৎপাদিত ইট। একই কথা বলেন, বিভিন্ন জিগজাগ ইট ভাটার মালিকরা। আবার প্রশাসনিকভাবেও জিগজাগ ভাটার মালিকরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে। জিগজাগ ভাটার মালিকরা অবৈধ কাঠ ব্যবহৃত ভাটা দ্রুত বন্ধে সর্বস্তরের প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে।

সাতক্ষীরা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউলের রয়েছে তিনটি ফিক্সড চিমনীর প্র্তঅবৈধ ইটভাটা। যেখানে পুড়ানো হচ্ছে প্রতিদিন কয়েকটন কাঠ। সাতক্ষীরায় বিভিন্ন জিগজাগ ইটভাটার মালিকরা নিয়ে বলেন ইটভাটা সাধারণ সম্পাদক রেজাউল এর ভাটায় যদি কাঠ পুড়ে তাহলে কাঠের পুড়ানো ইট ভাটা বন্ধ হবে কিভাবে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের বেশ কয়েকটি জেলার সহকারী পরিচালকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমাদের জেলা কার্যালয়গুলোতে নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট নাই, বিভাগীয় কার্যালয়ের ম্যাজিস্ট্রেট অথবা স্থানীয় জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে হয়। স্থানীয় প্রশাসন যদি নিজ উদ্যোগে এসব অবৈধ ইট ভাটা বন্ধে আরও বেশি তৎপর হয় তবে কাঠ ব্যবহারকারী ইটভাটাগুলো খুব দ্রুত বন্ধ করা সম্ভব।

এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মোঃ সাদিকুল ইসলাম বলেন, জ্বালানী হিসাবে ইটভাটায় কয়লা ব্যতীত অন্য কোন জ্বালানি যেমন কাঠ, বাশের মুথা, টায়ারের কালি ,প্লাস্টিকের বর্জ্য ,মেলামাইনের বর্জ্য বা অন্য কোন সামগ্রী ব্যবহার নিষিদ্ধ। যদি কেউ এইগুলা ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জনাব মোঃ ফিরোজ সরকার বলেন, যে সমস্ত ইটভাটা জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করছে এবং ইটভাটার মধ্য করাত কল স্থাপন করেছে সে সমস্ত ইটভাটা সমূলে উৎপাটন করা হবে।


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন