আগামী বছরের মার্চের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশের অন্যতম প্রাচীর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জয়ী হতে পারে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে। তবে আন্দোলনকারীদের নতুন দল বিএনপিকে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে। বার্তা সংস্থা এএফপি-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
আলোচ্য প্রতিবেদনটি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। নাহিদ ইসলাম বুধবার (০৫ মার্চ) এএফপিকে এ সাক্ষাৎকার দেন এবং যা শুক্রবার (০৭ মার্চ) প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিএনপি মনে করে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজন করে জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকার গঠন করা উচিত।
এএফপিকে নাহিদ বলেন, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে এখনো সমস্যার মুখে পড়ছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই নির্বাচন বিলম্বের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়। তবে এটা সত্যি নয়।’
গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের সবচেয়ে পরিচিত মুখগুলোর একটি নাহিদ ইসলাম। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেন তিনি। সম্প্রতি সরকার থেকে পদত্যাগ করেন নাহিদ। এরপর তার নেতৃত্বে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ হয় তরুণদের নতুন দল এনসিপির।
বাংলাদেশে সুদূরপ্রসারী সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহে ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এমনকি তরুণেরা যে কারণে জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেসব সংস্কারেও আগ্রহী নয় তারা।’ তিনি আরও বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান এবং এর পরবর্তী সময়ে আমরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা বাস্তবায়নে আমাদের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে আমরা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
এনসিপি আহ্বায়ক মনে করেন, ‘তার দল পরবর্তী সরকার গঠন করতে না পারলেও, তারা এমন একটি রাজনৈতিক শক্তির সূচনা করেছেন যা আগামী কয়েক দশক ধরে প্রভাবশালী থাকবে। কেউই জানতেন না, একটি অভ্যুত্থান হবে। তবে এটি হয়েছে। আমি আন্তরিকতার সঙ্গে আশা করি এবং বিশ্বাস করি যে আমরা এবার বিজয়ী হতে চলেছি। তবে এই নির্বাচনই পৃথিবীর শেষ নয়...আমাদের লক্ষ্য হলো এই শক্তিটাকে আরো ৫০ বা ১০০ বা বেশি বছর টিকিয়ে রাখা।’
এনসিপির ১৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণার পরই কমিটিতে একজন সমকামী অধিকারকর্মীর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির ডানপন্থি নানা মহল থেকে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
ফলে কমিটি ঘোষণার কয়েক দিন পরেই তাকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়। অভ্যুত্থানের পর থেকে ইনক্লুসিভ রাজনীতির ঘোষণা দিয়ে কমিটি গঠনের পরই এমন অবস্থান নিয়ে দেশটির উদারপন্থি মহলের সমালোচনা রয়েছে। তবে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেনি এনসিপি।
এ প্রসঙ্গে নাহিদ এএফপিকে বলেন, ‘আমরা অন্তর্ভুক্তিতে বিশ্বাস করি, কিন্তু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি দ্বারা নির্ধারিত কিছু সীমানা আছে।’
বৈচিত্র্য বিবেচনায় তার দল এনসিপির এখনো প্রশংসনীয় রেকর্ড রয়েছে বলেও দাবি করেন সাবেক এই উপদেষ্টা।
সব নাগরিকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নারীদের সামনে এনেছি এবং সব বর্ণ ও ধর্মের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। সব নাগরিক যাতে তাদের অধিকার উপভোগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা চেষ্টা করব।’