• সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৮:১২ অপরাহ্ন

চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে আবারও হট্টগোল।

নিজস্ব প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিনিধি / ৭
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

ফরম পূরণে কতিপয় শিক্ষার্থীদের কে সুযোগ দিয়ে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসলেন শামীমা সুলতানা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা না মানার অভিযোগ।

স্টাফ রিপোর্টার :চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া নিয়ে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। আলোচনা-সমালোচনা থামছেই না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের অভিযোগ উঠেছে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক শামীমা সুলতানার বিরুদ্ধে।শিক্ষক প্রতিনিধির মতামত ছাড়াই নিয়ম তান্ত্রিকভাবে যাচাই-বাছাই না করেই কিছু সংখ্যাক শিক্ষার্থীদেরকে ফরম পূরণে আর্থিক ছাড় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বলেন, অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতে এ সকল শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র ফরম পূরণ বাবদ বোর্ড ফি (অনলাইন ফিস) নিয়ে শিক্ষার্থীদের দু বছরের বেতন ও সেশন চার্জের টাকা মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। যাতে করে চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজ কলেজ প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এছাড়া অনেক শিক্ষকদের অভিযোগ, অবৈধভাবে জোরপূর্বক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চেয়ারে বসে প্রশাসন ও কলেজ এডহক কমিটির দোহাই দিয়ে নানা অনিয়ম করছেন শিক্ষক শামীমা সুলতানা।
জানাগেছে, অধ্যক্ষের অবসরজনিত শূন্যতা পূরণে গত ১১ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ (এডহক কমিটি) সভা করে। গভর্নিং বডির সেই সভায় চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক শামীমা সুলতানাকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে বিষয়টির তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানায় কলেজটির শিক্ষকরা। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সিংহভাগ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন। টানা ১৭ দিন তালাবদ্ধ থাকে অধ্যক্ষের কক্ষ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা না মেনেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে বসানো শিক্ষক শামীমা সুলতানাকে। তবে ঘটনার নতুন মোড় নেয় গত ১১ মার্চ। এদিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এর পক্ষে স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে বসা শামীমা সুলতানাকে বিধি বহির্ভূত ভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মর্মে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পুনরায় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পাঁচ জন শিক্ষকের মধ্য থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে রেজুলেশন পাঠাতে বলা হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়, ‘পৌর কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক শামীমা সুলতানা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি না হওয়ায় শামীমা সুলতানার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত। এমতাবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ধারা ৪ এর উপধারা ২(র) ও (রর) ধারা মোতাবেক অত্র কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামীমা সুলতানা-এর পরিবর্তে উপাধ্যক্ষ/জ্যেষ্ঠতম ০৫ (পাঁচ) জন শিক্ষকের মধ্যে হতে যেকোনো ০১ (একজন) শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে আগামী ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান সংক্রান্ত রেজ্যুলেশন, এমপিও শীটের কপি, দায়িত্ব প্রদান সংক্রান্ত পত্র, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানপত্র ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ অধিভুক্তি নবায়নের কপিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
এই পত্র প্রাপ্তির পরদিন ১২ মার্চ কলেজটির আন্দোলনরত শিক্ষকরা পুনরায় অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। তবে গতকাল রোববার কিছু শিক্ষার্থীদেরকে ফরম পূরণে সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে শিক্ষক শামীমা সুলতানা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে ঝোলানো তালা ভেঙ্গে ফেলে অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকেছেন বলে অভিযোগ আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা । আবার শিক্ষক শামিমা সুলতানার দাবি প্রশাসনের নির্দেশে তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলেন, ‘মাউশি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি এবং নীতিমালা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক নাজনীন আরা খাতুনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কথা। জ্যেষ্ঠ প্রভাষক শামীমা সুলতানাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয় এডহক কমিটি। কিন্তু তিনি ওই পদের যোগ্য নয়। সেটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন। তারপরও তিনি জোরপূর্বক দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা যারা আন্দোলনে ছিলাম, তারা অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিয়েছিলাম। তবে কলেজের সব কার্যক্রম চলছিলো। তিনি অধ্যক্ষর চেয়ারে বসতে না বসতেই একদিনে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার কাছাকাছি অর্থ শিক্ষার্থীদের গণহারে মওকুফ করেছেন নীতিমালা বহির্ভূতভাবে । ফরম পূরণের টাকা মওকুফেরও নীতিমালা আছে। সেটিও মানা হয়নি।
ফরমক্রমে প্রকৃত আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্যরাই এই সুবিধা পাবেন। এটা গণহারে সকলের জন্য নয়। কিন্তু তিনি সেসব কিছুই যাচাই-বাচাই করেননি।
তবে শিক্ষক শামিমা সুলতানা সকল দোষ দিচ্ছেন প্রশাসনের ওপর। তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসক, এডিসি জেনারেল ও এডহক কমিটির সদস্য সিদ্দিকুর রহমান তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। তারা যতক্ষণ না সরতে বলবে, তিনি অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেই থাকবেন।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্রের কথা উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। চিঠি আমি পাইনি। আমাকে কেউ বলেওনি।’ এ সময় তালা ভাঙ্গার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এডিসি স্যার ওসিকে বলে দিয়েছেন, থানার ওসি দাঁড়িয়ে থেকে তালা ভেঙ্গেছে।’ বিনা বিবেচনায় অর্থ মওকুফের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুনে টাকা মওকুফ করছি । ওদের বন্ধু-বান্ধব বলছে ওরা গরীব।’
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, ‘আমি শুনেছিলাম, পৌর কলেজে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেখানে গেছি। তালা আমরা ভাঙ্গিনি। আর এটা সম্পর্কে কিছুই জানিনা।’
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রী কলেজের এডহক কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য সিনিয়র সিটিজেন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান টেলিভিশন সাক্ষাতে বলেছিলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যদি শামীমা সুলতানার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন না করে সেটি আমরা মেনে নিবো। কিন্তু থেকে দেওয়া পত্রটি শামীমা সুলতানার নিয়োগকে বিধি সম্মত বলেনি। তারপরও তিনি কেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রী কলেজে এড হক কমিটি সভাপতি চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন