• বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:০১ পূর্বাহ্ন

রূপগঞ্জ নিরুত্তাপ মাঠে ঢিমেতালে প্রচারণা

মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন
মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন / ৭০
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবুর রহমান গতকাল বিকেলে রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া নগর এলাকায় প্রচারণা চালান
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগেরই দুজন। তাঁদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতা-কর্মী মাঠে নেমেছেন একজন প্রার্থীর পক্ষে।

ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থী হওয়ায় ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে না। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগেরই দুজন। তাঁদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতা-কর্মী মাঠে নেমেছেন একজন প্রার্থীর পক্ষে। ফলে উত্তাপহীন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফায় ২১ মে ভোট গ্রহণ হবে রূপগঞ্জে। এবারের নির্বাচনে উপজেলার ১৪২টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯০ হাজার ৬০৭ জন। চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান (দোয়াত কলম প্রতীক) এবং রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবু হোসেন রানু (আনারস প্রতীক) নির্বাচনের মাঠে আছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও রংধনু গ্রুপের পরিচালক মিজানুর রহমান এবং সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে যুব মহিলা লীগ নেত্রী ফেরদৌসী আক্তার ওরফে রিয়া একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে নির্বাচনের ঢিলেঢালা প্রচারণা দেখা গেছে। উপজেলার জনাকীর্ণ এলাকাগুলোতে দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী হাবিবুরের কিছু পোস্টার দেখা গেলেও আবু হোসেনের পোস্টার দেখা যায়নি। সড়কের পাশে দুই প্রার্থীর ফেস্টুন দেখা গেছে। তবে ভোট চেয়ে মাইকিং করতে দেখা যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার উপজেলার গোলাকান্দাইল মোড়ে কথা হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী ওমর হোসেনের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের অংশগ্রহণ না থাকায় ভোটের মাঠে এর প্রভাব পড়েছে। মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে আগ্রহ কম।

রূপসী এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা খাদিজাতুল কোবরা বলেন, ‘ভোটের দিন ভালো লাগলে কেন্দ্রে যাব। ভোট দেওয়া না দেওয়া নিয়ে এখনো তেমন কিছু ভাবিনি।’ ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম বলে মনে করেন এই ভোটার। তিনি বলেন, রূপগঞ্জে দুটি পদে ভোট হবে না। একটি পদের জন্য দুজন প্রার্থী। তাঁরা তুলনামূলক কম প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিছুদিন আগে জাতীয় নির্বাচনে যে পরিমাণ প্রচার-প্রচারণা ছিল, তার ১০ শতাংশও এই নির্বাচনে নেই।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রূপগঞ্জের জাঙ্গীর ও হারিন্দা এলাকায় হাবিবুরের দুটি নির্বাচনী উঠান বৈঠক দেখা গেছে। দোয়াত কলমের পক্ষে সংসদ সদস্যের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম মূর্তজা গণসংযোগ শেষে এসব উঠান বৈঠকে ভোট চান।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে গেছে, রূপগঞ্জে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে গোলাম মূর্তজাসহ পাঁচজন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে আছেন দুজন। সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীর স্বজনদের নির্বাচন করার ক্ষেত্রে দলীয় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন গোলাম মূর্তজা। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাবিবুল কাদির। এর আগে মামলা ও অর্থ পাচারের অভিযোগে অনলাইন ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানের প্রার্থিতা বাতিল হয়।

সূত্রটি বলছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীরের পছন্দের দুজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে একমাত্র প্রার্থী রংধনু গ্রুপের পরিচালক মিজানুর রহমান। মিজানুর ও তাঁর ভাই রফিকুল ইসলাম গত সংসদ নির্বাচনে গোলাম দস্তগীরের পক্ষে নির্বাচন করেন। এর প্রতিদান হিসেবেই মিজানুরকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হচ্ছে। আর রূপগঞ্জের সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম বিভিন্ন কারণে সমালোচিত হওয়ায় এ বছর তাঁর বদলে উপজেলা মহিলা লীগ নেত্রী ফেরদৌসী আক্তারকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

চেয়ারম্যান পদে যে দুজন প্রার্থী রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে হাবিবুরকে সংসদ সদস্যের প্রার্থী হিসেবেই সবাই জানেন। ভোটের শুরুতে গুঞ্জন উঠেছিল, আরেক প্রার্থী আবু হোসেন নির্বাচনে সংসদ সদস্যের প্রতিপক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়ার সমর্থন পাবেন। ফলে জমে উঠবে নির্বাচন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় জাতীয় নির্বাচনে শাহজাহান ভূঁইয়ার সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরাও উপজেলা নির্বাচনে হাবিবুরের পক্ষেই কাজ করছেন। ফলে ভোটের মাঠে একতরফা প্রভাব বিস্তার করছেন হাবিবুর।

তবে নিজের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আবু হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার সাধ্যমতো প্রচার চালাচ্ছি। প্রতিদিন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি। মানুষও সাড়া দিচ্ছে। আমি নির্বাচিত হলে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত একটি আধুনিক রূপগঞ্জ গড়ে তুলতে কাজ করব।’

হাবিবুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা উপজেলার প্রত্যেক ভোটারের কাছে গিয়েছি। মানুষ ব্যাপকভাবে দোয়াত কলমের পক্ষে সাড়া দিচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণ ও নারী ভোটাররা তাঁদের নানা অসুবিধা ও চাহিদার কথা জানাচ্ছেন। আমরাও কথা দিচ্ছি, নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্যের সঙ্গে মিলে রূপগঞ্জের বাকি কাজগুলো শেষ করব।’

ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি থাকবে জানিয়ে হাবিবুর বলেন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসার বিষয়ে সোচ্চার আছেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হওয়ায় ভোটাররাও কেন্দ্রে আসতে নিজেদের আগ্রহের কথা জানাচ্ছেন।

প্রার্থীরা কেন্দ্রে ভোটার নিয়ে আসার চেষ্টা করলেও ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করতে রূপগঞ্জে কাজ করছেন উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এরই মধ্যে বিএনপি রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে প্রচারপত্র বিলি করেছে। রূপগঞ্জের বাসিন্দা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে দেশের মানুষের টাকায় নির্বাচনের নামে তামাশা করছে। আমরা ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি। গত জাতীয় নির্বাচনে মানুষ যেভাবে সরকারের পাতানো নির্বাচনকে বর্জন করেছে, এবার একইভাবে তারা উপজেলা নির্বাচনকেও বর্জন করবে।’


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন