সংবাদ প্রকাশের একদিনের মাথায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের তিন নং ফটকের দোকানসমূহে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে নেওয়া অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করেছেন জড়িতরা।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত ২১ মে (মঙ্গলবার) থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেটের সকল এই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন সংশ্লিষ্টরা। এদিন সন্ধ্যা থেকে প্রতিদিনই দোকানগুলোতে চার্জিং লাইট ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে এসব দোকানে।
এছাড়া, মঙ্গলবার থেকে এ পর্যন্ত তানভীর হাসান সৈকতের উন্মুক্ত লাইব্রেরিতেও প্রায় ২০টি বাতির একটিও এখন পর্যন্ত জ্বলতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে এক দোকানি কে বলেন, আমি শুনেছিলাম, কয়েকদিন আগে নাকি সাংবাদিক আসছিলো এবং এখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে নিউজ হয়েছে। নিউজ হওয়ার কারণে যারা বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতো, তারা লাইন কেটে দিয়েছে। এখন সব দোকানেই নিজেদের ব্যবস্থাপনায় বাতি জ্বালানো হয়। কেউ কেউ চার্জিং লাইট ব্যবহার করছে, কেউ আবার ছোট ছোট ব্যাটারি আবার কেউ মিনি জেনারেটর ব্যবহার করছে। এখন আর বিদ্যুতের লাইন নাই।
এক জুসের দোকানি কে বলেন, বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দেওয়ায় জুস বানাতে ব্লেন্ডার মেশিনের জন্য আমরা মিনি জেনারেটর ব্যবহার করছি। সাথে লাইটও জ্বলছে।
অন্যদিকে, উন্মুক্ত লাইব্রেরির আশেপাশের দোকানিরা কে বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে লাইব্রেরির বাতি জ্বালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিনের বেলায়ও অনেকসময় লাইব্রেরির গেইট বন্ধ দেখা যাচ্ছে ইদানীং। ঢাবির কয়েকজন শিক্ষার্থীও এ ব্যাপারে একই কথা জানান। এছাড়া, সরেজমিনে গিয়েও এই চিত্র দেখা যায়।
এর আগে, গত সোমবার (২০ মে) দিবাগত রাতে ‘অনলাইন সংস্করণ’-এ “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাজার বসিয়ে অবৈধ বিদ্যুতের ব্যবসা” ও এর পরের দিন ‘প্রিন্ট সংস্করণ’-এ “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিদ্যুৎ সংযোগে লাখ টাকার বাণিজ্য, উন্মুক্ত লাইব্রেরির তিন কেয়ারটেকার জড়িত” শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকের দোকানগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে প্রতি মাসে প্রায় এক লক্ষ টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠে তানভীর হাসান সৈকতের উন্মুক্ত লাইব্রেরির তিন কেয়ারটেকার মফিজ, সা’দ আলী উরফে চাঁদ ও রিয়াদের বিরুদ্ধে।এর বাইরে, শাহজাহান ও ইয়াসিন নামে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধেও কয়েকটি দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি সংলগ্ন ফটকে ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’ লেখা পিলারে স্থাপিত বৈদ্যুতিক বাতির তার থেকে সংযোগ নিয়ে এই এলাকার সকল দোকানে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছিলো। এছাড়া, ফটকের পাশের ফুটপাতে অবস্থিত বিদ্যুৎ সংযোগের একটি বাক্স থেকে অবৈধভাবে দুটি লাল তারের মাধ্যমে উন্মুক্ত লাইব্রেরিতেও বিদ্যুতের সংযোগ ঘটানো হয়েছিলো, যার অনুসন্ধানে সম্প্রতি উঠে আসে।
জানা যায়, উদ্যানের এই গেইটে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১টা বা এরও পর পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শত দোকান চলে। এর মধ্যে প্রায় ৬৫টি দোকানে বাতি জ্বালাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিলো। এসব দোকানে পরিধিভেদে ১ থেকে ৫ টি পর্যন্ত বাতি ব্যবহার করা হতো। প্রতি বাতি বাবদ বিল নেওয়া হতো দৈনিক ৩০ টাকা এবং দুই বাতির বিল একসঙ্গে ৫০টা টাকা করে। প্রতি দোকানে গড়ে দুটি করে বাতি ধরা হলে প্রতিদিন এর বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার টাকারও, যা একমাসে মোট ৯৭ হাজার টাকা হয়। এছাড়া উন্মুক্ত লাইব্রেরিতেও প্রায় ২০টি উচ্চ মাত্রার বাতি জ্বালানো হতো। এর বাইরে, অভিযুক্ত শাহজাহানের পাঁচটি (পানির পাইকারি দোকান ১টি, চটপটির ২টি, আইস্ক্রীমের ১টি ও চায়ের দোকান ১টি) আছে। যার সবগুলোতেই অবৈধ সংযোগ নিয়ে ৩-৫ টি করে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হতো।
উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে তানভীর হাসান সৈকত কে বলেন, লাইব্রেরিতে এখন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ আছে। মিটারের জন্য আবেদন করা হয়েছে, সেটার কার্যক্রম চলমান। এখনি বিষয়টি ঠিকঠাক করে নিচ্ছি। এর আগে সংবাদ প্রকাশ করে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি সামনে এনেছে। এটা নিয়ে আমার আরও আগে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল, নানা ব্যস্ততায় যেটা হয়ে উঠেনি।