• মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১০:৩১ অপরাহ্ন

তিন কারণে ছয় রাজ্যে আসন কমেছে বিজেপির

মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন
মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন / ৬৪
মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০২৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে সরকার গড়তে হতে পারে, নরেন্দ্র মোদি এমনটা কখনো কল্পনাও করেননি। অথচ সেটাই সত্যি হলো। কী কারণে উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে আসন কমল, আপাতত সেটাই বিজেপি খতিয়ে দেখতে চাইছে।

প্রাথমিকভাবে বিজেপি মনে করছে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট এবার এই রাজ্যগুলোতে ব্যাপক কাজ করেছে। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশে। সেই রাজ্যে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির ভোট একে অপরের দিকে পুরোপুরি বদলও হয়েছে। এই ভোট স্থানান্তরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দলিত-অনগ্রসর ভোটে ব্যাপক ভাঙন।

এই রাজ্যে দলিত ও অনগ্রসর ভোট বিজেপি তার দিকে টেনে এনেছিল প্রধানত সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং মারফত। সে কারণে মায়াবতীর দল বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) দিনে দিনে হীনবল হয়েছে। কিন্তু এবার কংগ্রেস সংবিধান রক্ষার প্রশ্নটি বড় করে তুলে ধরে। প্রতিটি জনসভায় রাহুল গান্ধী সংবিধান হাতে নিয়ে দলিত-অনগ্রসর সমাজের উদ্দেশে বলেছেন, বিজেপি ৪০০ আসন পেতে চায়, যাতে তারা আম্বেদকরের সংবিধান নিজেদের মতো করে লিখতে পারে। তারা সেটা করতে চায় সংরক্ষণ প্রথা তুলে দিতে।

কংগ্রেসের এই প্রচার উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিজেপি সেই প্রচারের মোকাবিলা করতে পারেনি। এসব রাজ্যে বিজেপি দলিত-অনগ্রসরদের সমর্থন হারিয়ে খুইয়েছে ৩৭টি আসন।

দ্বিতীয় যে প্রচার বিজেপিকে বিপদে ফেলেছে, সেটা হচ্ছে ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও রাজস্থান থেকে হাজার হাজার তরুণ সেনাবাহিনীতে ভর্তি হন। ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প সেনাবাহিনীতে স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা তুলে দিয়ে চুক্তিভিত্তিক চার বছরের চাকরি এনেছে। মেয়াদ শেষে জওয়ানরা কিছু টাকা পেয়ে বেকার হবেন। চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে থাকাকালে শহীদ হলে ক্ষতিপূরণ পাবেন, কিন্তু শহীদের মর্যাদা পাবেন না। অন্যান্য সুযোগ–সুবিধাও পাবেন না।

রাহুল প্রতিটি জনসভায় বলেছেন, সরকার গড়ার পর এই প্রথা তুলে দেওয়া হবে। সেনাবাহিনীতে দুই ধরনের শহীদের স্থান থাকবে না। সবাই একই রকম মর্যাদা পাবেন। একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও পেনশন পাবেন। নিযোগ হবে স্থায়ী। ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকেরাও সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর প্রভাবও বিজেপি ব্যর্থ করতে পারেনি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার কথা বললেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।

কৃষক আন্দোলনের রেশও এই রাজ্যগুলোতে ব্যাপকভাবে পড়েছে এবং তা বিজেপির বিরুদ্ধে গেছে। কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটের প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে কৃষিপণ্যের সহায়ক মূল্য বা এমএসপির আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কংগ্রেসের ইশতেহারেও এই প্রতিশ্রুতি লিখিতভাবে দেওয়া হয়। বিজেপি সেই প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

এসব রাজ্যের ক্ষতি বিজেপি হিন্দি–বলয়ের অন্যত্র পুষিয়ে দিতে পারেনি। তারা ভেবেছিল, পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ২৮টি আসন পাবে। ঝাড়খন্ডেও প্লাবন ঘটাবে। নীতীশ কুমারকে দলে টেনে বিহার বিরোধীশূন্য করবে। অথচ মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, দিল্লি, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড ও ওডিশার চমৎকার ভালো ফলও তাদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে দিল না। প্রধানমন্ত্রী হলেও মোদিকে এখন পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে।

উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানে দলীয় সমীকরণ বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে কি না, সেটাও বিজেপিকে খতিয়ে দেখতে হবে। রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজেকে গুরুত্বহীন করে দেওয়া বিজেপির ভুল সিদ্ধান্ত। একইভাবে বিরোধীরা যখন প্রচার করছিল, তৃতীয়বার নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়ে নরেন্দ্র মোদি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে কোণঠাসা করে দেবেন, শীর্ষ নেতারা একবারও সেই প্রচার খণ্ডন করেননি। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ কিংবা জে পি নাড্ডা কেউই সেই ‘অপপ্রচারের’ বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন