• শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন

ধসের শঙ্কায়ও থেমে নেই পাহাড় কাটা

মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন
মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন / ৪৮
শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪
রাঙ্গুনিয়ায় অবাধে চলছে পাহাড় কাটা। ছবি : প্রতিদিন খবর
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

টানা বৃষ্টিতে রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও থেমে নেই পাহাড় কাটার মহাযজ্ঞ। এদিকে এসব দুর্ঘটনা এড়াতে পাহাড়ে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে সরে যেতে মাইকিং করছে ফায়ার সার্ভিস। বৃষ্টিতে একদিকে পাহাড়ধসের শঙ্কা, অন্যদিকে চলছে পাহাড় নিধন। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বুধবার (২৪ জুলাই) সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর মসজিদ ভিটা এলাকায় আবছার নামে এক ব্যক্তি তার ঘরের পেছনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড় কেটে সাবাড় করেছেন। অথচ মাটির গুদামঘরটি ওই পাহাড়ের পাদদেশে। যে কোনো সময় ধসে পড়ে ঘরটিতে বসবাসরত বাসিন্দাদের প্রাণহানি ঘটতে পারে। একই চিত্র দেখা গেছে গ্রামটির আরও একাধিক স্থানে।

অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড খলিফাপাড়ার দুর্গম এলাকায় সড়কের পাশ থেকেই বিশালাকার পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। পাহাড়ের গায়ে এক্সক্যাভেটরের চিহ্ন দেখে বোঝা যায়, সম্প্রতি পাহাড় কাটা হয়েছে। পাহাড়ের উপরে থাকা ব্যাপক গাছসহ বিপজ্জনকভাবে কাটা পাহাড় যে কোনো সময় ধসে পড়ে পাশের বসতঘরসহ সড়কে চলাচলরত মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তবে পাহাড় কাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত কে? এই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় ফারুখ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি প্রভাব ও ভয়ভীতি দেখিয়ে এসব পাহাড় কাটছেন বলে জানা যায়। শুধু পাহাড়ই নয়, এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৬ নম্বর ওয়ার্ড বাসিন্দাদের সবচেয়ে বড় কবরস্থান দখল করে সেখানে গাছের চারা লাগিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। আরএস এবং বিএস খতিয়ানে কবরস্থান হিসেবে উল্লেখ থাকার পরও কবরস্থানের জন্য নির্ধারিত পাহাড়টি জোরপূর্বক দখল করায় ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসী। প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করার জন্য কেউই সাহস পাচ্ছেন না বলে সরেজমিন জানা যায়। তাৎক্ষণিক তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে কেউ তার পরিচয় কিংবা মোবাইল ফোন নম্বর দিতে রাজি হননি।

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী মোবাইল ফোনে জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কবরস্থান দখল থেকে বিরত থাকার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। এর পরও সে গাছ লাগিয়ে দিয়েছে। তাকে ডেকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইসলামপুরে পাহাড় কাটার কারণে সড়কগুলো ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়গুলো প্রশাসনকে বিভিন্ন সময় জানানো হয়েছে। আশা করি প্রশাসন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৩ জুন উপজেলার ইসলামপুর ও দক্ষিণ রাজানগর এলাকায় পাহাড়ধসে মাটিচাপায় মারা গিয়েছিল নারী-শিশুসহ ২৩ জন। পাহাড়ধস ট্র্যাজেডির সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও কাঁদায় সবাইকে। কিন্তু এর পরও কমেনি পাহাড়ের পাদদেশে মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। বরং সারাবছর ধরে বেপরোয়াভাবে কাটা হয় পাহাড়। দিন দিন বাড়ছে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস। উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে ১৫ হাজার একর বনভূমি বা পাহাড় রয়েছে। যেখানে ঝুঁকি নিয়ে থাকছেন ১০ হাজার পরিবারের অন্তত অর্ধলাখ বাসিন্দা। এই কয় বছরে তাদের সরানোর দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের এসব বাসিন্দা ঝুঁকি আছে যেনেও বাধ্য হয়ে পাহাড়ে পরিবার নিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান তারা।

এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহবুব বলেন, সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য। যারা পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন