ঢাকা ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জামায়াত এখন জিয়াউর রহমানের বিএনপির মতোই জনপ্রিয়: তাহের Logo বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে সেনা ঘাঁটি ও সেনা স্টেশন করলো ভারত Logo “বিপাশার রাজনীতিতে নতুন খেলা ইলিয়াস মোল্লার তাল ফেলে সেলিম ভূঁইয়ার বিটে নাচ” Logo মিত্রদের ৪০ আসনে ছাড় দিতে পারে বিএনপি, চলছে দরকষাকষি Logo আরপিও সংশোধন পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে: ইসি সচিব Logo গলাচিপায় ‘ভিপি নুর নাকি হাসান মামুন’ বিতর্কে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত ১৫ Logo নিষিদ্ধ আ.লীগ ৪ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে: গোলাম মাওলা রনি Logo বিপাশার রাজনীতিতে নতুন খেলা Logo নতুন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই ব্যবসা চলবে না : ডাকসু ভিপি Logo বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ চারটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে: রনি

দাবি করা চাঁদা না পেয়ে গাজীপুর মহানগরীর টেক কাথোরা এলাকার একটি রিসোর্ট বন্ধ

দাবি করা চাঁদা না পেয়ে গাজীপুর মহানগরীর টেক কাথোরা এলাকার একটি রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। গত বুধবার সকালে রিসোর্টের প্রধান ফটকে এক ট্রাক বালু ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। হুমকি দেওয়া হয়েছে ওই রিসোর্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।

রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়া এবং চাঁদার অভিযোগে রিসোর্টের কর্তৃপক্ষ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ করেছে। যাঁর বিরুদ্ধে রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তিনি হলেন মো. রাসেল রানা। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক এবং টেক কাথোরা এলাকার বাসিন্দা।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, টেক কাথোরা এলাকায় রিভেরি নামের একটি রিসোর্ট প্রায় ১০ বছর ধরে পরিচালনা করছেন এহছানুল কাদীর নামের এক ব্যবসায়ী। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে নানাভাবে রিসোর্টে অতিথিদের যাতায়াত, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন বিএনপি নেতা রাসেল রানা। কয়েক মাস ধরে তিনি প্রতি মাসে ৬৫ হাজার করে চাঁদা দাবি করে আসছেন। বিভিন্ন সময়ে রিসোর্টে কর্মরত দুই ব্যবস্থাপককে ফোন করে চাঁদা না দিলে রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন রাসেল এবং তাঁদের চাকরি ছেড়ে এলাকা থেকে চলে যেতে বলেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, বিএনপির ওই নেতা একপর্যায়ে সময় বেঁধে দেন ৪ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে রিসোর্ট পরিচালনা বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় রাসেল ও তাঁর লোকজন রিসোর্টে আক্রমণ করে ভাঙচুর করবেন এবং রিসোর্টে কর্মরত ব্যবস্থাপক ও স্টাফদের শারীরিকভাবে মারধর করবেন। এ ছাড়া রাসেল হুমকি দেন, রিসোর্টের যোগাযোগের জন্য যে দুটি অফিশিয়াল মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়, তা বন্ধ করে দিতে হবে, যাতে কোনো অতিথি বা অন্য কেউ রিসোর্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন।

এ বিষয়ে বিএনপি নেতা রাসেল রিসোর্টের মাহবুব নামের এক ব্যবস্থাপককে ফোন করেন। সেই ফোন রেকর্ডে রাসেলকে বলতে শোনা যায়, ‘তুই ম্যানেজার, বেডা তোরে আমি বললাম, সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমার পক্ষে না আসা পর্যন্ত চেয়ারম্যান রিসোর্টে প্রবেশ করতে পারবে না। আর মাহবুব, এখন থেকে গেস্ট ঢোকানো বন্ধ। একটা গেস্টও যাতে না ঢোকে। আমি সিকিউরিটি গার্ডকে বলে দিতাছি। আজকে মনে হয় গেস্ট ঢুকসে, তা–ই না। এখন থেকে আর একটা গেস্টও ঢুকবে না।’

আরও পড়ুন  ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনেই সম্ভব’

এ সময় ব্যবস্থাপক মাহবুব বলেন, ‘চেয়ারম্যান এলে আমি কথা বলি।’ তখন রাসেল রানা ভয় দেখিয়ে বলেন, ‘চেয়ারম্যান এখানে আসতে পারবে না। আসলে আমি এলাকার সব লোক নিয়ে ভেতরে ঢুকমু। আবার ওয়াজ আছে, ওয়াজের সব লোক নিয়া ঢুকতাছি খারা।’ এরপর মাহবুব রিসোর্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা খায়রুলকে ফোন ধরিয়ে দিলে তাঁকে বিএনপি নেতা রাসেল রানা বলেন, ‘তুমি কি আমারে চিনো? বাড়ি কই তোমার? শোনো, এই রিসোর্টে অবৈধ ব্যবসা হয়, খারাপ অপকর্ম হয়, বুঝছ। এখন থেকে একটা গেস্টও ঢুকবে না। রিসোর্টের চেয়ারম্যানকে ঢুকতে দিবা না। সে যদি ঢুকে, তাইলে আমি কিন্তু তোমারে বাইর কইরা দিমু। ১১টার পরে যদি একটা লোক ঢুকে তাইলে তোমার পিঠের চামড়া থাকব না। বইলা দিলাম। গেইটে এখনই তালা দেও।’

এ বিষয়ে রিসোর্টের চেয়ারম্যান এহছানুল কাদীর বলেন, রাসেল রানা তাঁর দলবল লেলিয়ে দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে রিসোর্টের ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যান। এ ছাড়া প্রতি মাসে তাকে ৬৫ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়ার দাবি করেন।
চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বিএনপি নেতা রাসেল রানা বলেন, ওই রিসোর্টে অবৈধ কাজ হয়। তাই এলাকার লোকজন নিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গেটের সামনে কে বা কারা বালুর বস্তা ফেলেছেন, সেটি জানেন না বলে দাবি করেন রাসেল রানা।

গাজীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সিদ্দিক হোসেন বলেন, রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়া এবং চাঁদা দাবির একটি অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে রিসোর্ট চালু করতে বললেও তারা সাহস পাচ্ছে না। এ ছাড়া রাসেল রানাও চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

ট্যাগস :

জামায়াত এখন জিয়াউর রহমানের বিএনপির মতোই জনপ্রিয়: তাহের

দাবি করা চাঁদা না পেয়ে গাজীপুর মহানগরীর টেক কাথোরা এলাকার একটি রিসোর্ট বন্ধ

আপডেট সময় : ০২:৩২:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

দাবি করা চাঁদা না পেয়ে গাজীপুর মহানগরীর টেক কাথোরা এলাকার একটি রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। গত বুধবার সকালে রিসোর্টের প্রধান ফটকে এক ট্রাক বালু ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। হুমকি দেওয়া হয়েছে ওই রিসোর্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।

রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়া এবং চাঁদার অভিযোগে রিসোর্টের কর্তৃপক্ষ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ করেছে। যাঁর বিরুদ্ধে রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তিনি হলেন মো. রাসেল রানা। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক এবং টেক কাথোরা এলাকার বাসিন্দা।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, টেক কাথোরা এলাকায় রিভেরি নামের একটি রিসোর্ট প্রায় ১০ বছর ধরে পরিচালনা করছেন এহছানুল কাদীর নামের এক ব্যবসায়ী। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে নানাভাবে রিসোর্টে অতিথিদের যাতায়াত, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন বিএনপি নেতা রাসেল রানা। কয়েক মাস ধরে তিনি প্রতি মাসে ৬৫ হাজার করে চাঁদা দাবি করে আসছেন। বিভিন্ন সময়ে রিসোর্টে কর্মরত দুই ব্যবস্থাপককে ফোন করে চাঁদা না দিলে রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন রাসেল এবং তাঁদের চাকরি ছেড়ে এলাকা থেকে চলে যেতে বলেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, বিএনপির ওই নেতা একপর্যায়ে সময় বেঁধে দেন ৪ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে রিসোর্ট পরিচালনা বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় রাসেল ও তাঁর লোকজন রিসোর্টে আক্রমণ করে ভাঙচুর করবেন এবং রিসোর্টে কর্মরত ব্যবস্থাপক ও স্টাফদের শারীরিকভাবে মারধর করবেন। এ ছাড়া রাসেল হুমকি দেন, রিসোর্টের যোগাযোগের জন্য যে দুটি অফিশিয়াল মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়, তা বন্ধ করে দিতে হবে, যাতে কোনো অতিথি বা অন্য কেউ রিসোর্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন।

এ বিষয়ে বিএনপি নেতা রাসেল রিসোর্টের মাহবুব নামের এক ব্যবস্থাপককে ফোন করেন। সেই ফোন রেকর্ডে রাসেলকে বলতে শোনা যায়, ‘তুই ম্যানেজার, বেডা তোরে আমি বললাম, সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমার পক্ষে না আসা পর্যন্ত চেয়ারম্যান রিসোর্টে প্রবেশ করতে পারবে না। আর মাহবুব, এখন থেকে গেস্ট ঢোকানো বন্ধ। একটা গেস্টও যাতে না ঢোকে। আমি সিকিউরিটি গার্ডকে বলে দিতাছি। আজকে মনে হয় গেস্ট ঢুকসে, তা–ই না। এখন থেকে আর একটা গেস্টও ঢুকবে না।’

আরও পড়ুন  বৃষ্টি নিয়ে যে পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অফিস

এ সময় ব্যবস্থাপক মাহবুব বলেন, ‘চেয়ারম্যান এলে আমি কথা বলি।’ তখন রাসেল রানা ভয় দেখিয়ে বলেন, ‘চেয়ারম্যান এখানে আসতে পারবে না। আসলে আমি এলাকার সব লোক নিয়ে ভেতরে ঢুকমু। আবার ওয়াজ আছে, ওয়াজের সব লোক নিয়া ঢুকতাছি খারা।’ এরপর মাহবুব রিসোর্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা খায়রুলকে ফোন ধরিয়ে দিলে তাঁকে বিএনপি নেতা রাসেল রানা বলেন, ‘তুমি কি আমারে চিনো? বাড়ি কই তোমার? শোনো, এই রিসোর্টে অবৈধ ব্যবসা হয়, খারাপ অপকর্ম হয়, বুঝছ। এখন থেকে একটা গেস্টও ঢুকবে না। রিসোর্টের চেয়ারম্যানকে ঢুকতে দিবা না। সে যদি ঢুকে, তাইলে আমি কিন্তু তোমারে বাইর কইরা দিমু। ১১টার পরে যদি একটা লোক ঢুকে তাইলে তোমার পিঠের চামড়া থাকব না। বইলা দিলাম। গেইটে এখনই তালা দেও।’

এ বিষয়ে রিসোর্টের চেয়ারম্যান এহছানুল কাদীর বলেন, রাসেল রানা তাঁর দলবল লেলিয়ে দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে রিসোর্টের ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যান। এ ছাড়া প্রতি মাসে তাকে ৬৫ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়ার দাবি করেন।
চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বিএনপি নেতা রাসেল রানা বলেন, ওই রিসোর্টে অবৈধ কাজ হয়। তাই এলাকার লোকজন নিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গেটের সামনে কে বা কারা বালুর বস্তা ফেলেছেন, সেটি জানেন না বলে দাবি করেন রাসেল রানা।

গাজীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সিদ্দিক হোসেন বলেন, রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়া এবং চাঁদা দাবির একটি অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে রিসোর্ট চালু করতে বললেও তারা সাহস পাচ্ছে না। এ ছাড়া রাসেল রানাও চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।