ঢাকা ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জামায়াত এখন জিয়াউর রহমানের বিএনপির মতোই জনপ্রিয়: তাহের Logo বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে সেনা ঘাঁটি ও সেনা স্টেশন করলো ভারত Logo “বিপাশার রাজনীতিতে নতুন খেলা ইলিয়াস মোল্লার তাল ফেলে সেলিম ভূঁইয়ার বিটে নাচ” Logo মিত্রদের ৪০ আসনে ছাড় দিতে পারে বিএনপি, চলছে দরকষাকষি Logo আরপিও সংশোধন পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে: ইসি সচিব Logo গলাচিপায় ‘ভিপি নুর নাকি হাসান মামুন’ বিতর্কে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত ১৫ Logo নিষিদ্ধ আ.লীগ ৪ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে: গোলাম মাওলা রনি Logo বিপাশার রাজনীতিতে নতুন খেলা Logo নতুন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই ব্যবসা চলবে না : ডাকসু ভিপি Logo বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ চারটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে: রনি

এক মাস না যেতেই ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৪৫:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫৮ বার পড়া হয়েছে

ফ্রান্সের রাজনীতিতে আবারও বড় ধরনের অস্থিরতার ইঙ্গিত মিলেছে। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই এবং নিজের মন্ত্রিসভা ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা না যেতেই পদত্যাগ করলেন নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকোর্নু।

সোমবার (৪ অক্টোবর) ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকোর্নু পদত্যাগ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।

প্রায় এক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান লেকোর্নু। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি প্রবল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপে ছিলেন। ঋণ সংকটে জর্জরিত ফ্রান্সের বিভক্ত সংসদে বাজেট পাস করানো তার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। সংসদের ভেতরে-বাইরে রাজনৈতিক বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে কার্যকর সরকার পরিচালনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

রোববার রাতে তিনি নিজের নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, সোমবার সকালে হঠাৎ পদত্যাগ করেন। এর ফলে ফ্রান্সের ইতিহাসে তার সরকার অন্যতম স্বল্পস্থায়ী সরকারে পরিণত হয়। সোমবার বিকেলে নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও, সেটি আর অনুষ্ঠিত হয়নি।

নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য তালিকা প্রকাশের পর থেকেই তা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই অভিযোগ করেন, লেকোর্নু তার অজনপ্রিয় পূর্বসূরি ফ্রাঁসোয়া বাইরুর নীতি থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেও, তার মন্ত্রিসভায় পুরনো মুখের আধিক্যই দেখা গেছে। এতে তার প্রতি জনগণের আস্থা কমে যায় এবং রাজনৈতিক চাপ আরও বাড়তে থাকে।

পদত্যাগের আগে সাংবাদিকদের সামনে লেকোর্নু বলেন, ‘আমি সমঝোতা করতে প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু প্রতিটি রাজনৈতিক দলই চাইছিল অন্য দল যেন তাদের পুরো কর্মসূচি মেনে নেয়। এভাবে কোনো অগ্রগতি সম্ভব ছিল না।’ তার এই বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যায়, ফ্রান্সের সংসদে এখন এমন এক মেরুকরণ তৈরি হয়েছে, যেখানে সমঝোতার কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই।

আরও পড়ুন  মিডিয়া সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ বড় ছেলের হাতে তুলে দিলেন রুপার্ট মারডক

২০২৪ সালের আগাম নির্বাচনের পর থেকেই ফ্রান্সের সংসদ চরমভাবে দুই মেরুতে বিভক্ত— একদিকে অতিদক্ষিণপন্থি, অন্যদিকে অতিবামপন্থি শক্তি। এই বিভাজনের মধ্যেই লেকোর্নু ছিলেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর গত দুই বছরে পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী। তার আকস্মিক পদত্যাগ এখন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বিরোধীরা বলছে, ক্রমাগত সরকার পরিবর্তন প্রমাণ করে ম্যাক্রোঁ নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন।

রাজনৈতিক এই টালমাটাল পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে ফ্রান্সের অর্থনীতিতেও। লেকোর্নুর পদত্যাগের খবর প্রকাশের পরপরই শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক দুই শতাংশের বেশি হ্রাস পায়। বিনিয়োগকারীরা এখন ফ্রান্সের বাজেট সংকট ও নেতৃত্বহীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছেন।

ইউরোপের অন্যতম বড় অর্থনীতি ফ্রান্স এখন কার্যত এক রাজনৈতিক অচলাবস্থার ফাঁদে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমছে, আর সংসদে কোনো দলই স্থিতিশীল সরকার গঠনে সক্ষম হচ্ছে না। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারাবাহিক রাজনৈতিক অস্থিরতা যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা শুধু ফ্রান্স নয়, গোটা ইউরোপীয় অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ট্যাগস :

জামায়াত এখন জিয়াউর রহমানের বিএনপির মতোই জনপ্রিয়: তাহের

এক মাস না যেতেই ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

আপডেট সময় : ০১:৪৫:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

ফ্রান্সের রাজনীতিতে আবারও বড় ধরনের অস্থিরতার ইঙ্গিত মিলেছে। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই এবং নিজের মন্ত্রিসভা ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা না যেতেই পদত্যাগ করলেন নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকোর্নু।

সোমবার (৪ অক্টোবর) ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকোর্নু পদত্যাগ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।

প্রায় এক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান লেকোর্নু। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি প্রবল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপে ছিলেন। ঋণ সংকটে জর্জরিত ফ্রান্সের বিভক্ত সংসদে বাজেট পাস করানো তার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। সংসদের ভেতরে-বাইরে রাজনৈতিক বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে কার্যকর সরকার পরিচালনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

রোববার রাতে তিনি নিজের নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, সোমবার সকালে হঠাৎ পদত্যাগ করেন। এর ফলে ফ্রান্সের ইতিহাসে তার সরকার অন্যতম স্বল্পস্থায়ী সরকারে পরিণত হয়। সোমবার বিকেলে নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও, সেটি আর অনুষ্ঠিত হয়নি।

নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য তালিকা প্রকাশের পর থেকেই তা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই অভিযোগ করেন, লেকোর্নু তার অজনপ্রিয় পূর্বসূরি ফ্রাঁসোয়া বাইরুর নীতি থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেও, তার মন্ত্রিসভায় পুরনো মুখের আধিক্যই দেখা গেছে। এতে তার প্রতি জনগণের আস্থা কমে যায় এবং রাজনৈতিক চাপ আরও বাড়তে থাকে।

পদত্যাগের আগে সাংবাদিকদের সামনে লেকোর্নু বলেন, ‘আমি সমঝোতা করতে প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু প্রতিটি রাজনৈতিক দলই চাইছিল অন্য দল যেন তাদের পুরো কর্মসূচি মেনে নেয়। এভাবে কোনো অগ্রগতি সম্ভব ছিল না।’ তার এই বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যায়, ফ্রান্সের সংসদে এখন এমন এক মেরুকরণ তৈরি হয়েছে, যেখানে সমঝোতার কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই।

আরও পড়ুন  ইসরায়েলের পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে বাধার মুখে ট্রাম্প

২০২৪ সালের আগাম নির্বাচনের পর থেকেই ফ্রান্সের সংসদ চরমভাবে দুই মেরুতে বিভক্ত— একদিকে অতিদক্ষিণপন্থি, অন্যদিকে অতিবামপন্থি শক্তি। এই বিভাজনের মধ্যেই লেকোর্নু ছিলেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর গত দুই বছরে পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী। তার আকস্মিক পদত্যাগ এখন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বিরোধীরা বলছে, ক্রমাগত সরকার পরিবর্তন প্রমাণ করে ম্যাক্রোঁ নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন।

রাজনৈতিক এই টালমাটাল পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে ফ্রান্সের অর্থনীতিতেও। লেকোর্নুর পদত্যাগের খবর প্রকাশের পরপরই শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক দুই শতাংশের বেশি হ্রাস পায়। বিনিয়োগকারীরা এখন ফ্রান্সের বাজেট সংকট ও নেতৃত্বহীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছেন।

ইউরোপের অন্যতম বড় অর্থনীতি ফ্রান্স এখন কার্যত এক রাজনৈতিক অচলাবস্থার ফাঁদে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমছে, আর সংসদে কোনো দলই স্থিতিশীল সরকার গঠনে সক্ষম হচ্ছে না। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারাবাহিক রাজনৈতিক অস্থিরতা যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা শুধু ফ্রান্স নয়, গোটা ইউরোপীয় অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।