ঢাকা ০৬:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জামায়াত এখন জিয়াউর রহমানের বিএনপির মতোই জনপ্রিয়: তাহের Logo বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে সেনা ঘাঁটি ও সেনা স্টেশন করলো ভারত Logo “বিপাশার রাজনীতিতে নতুন খেলা ইলিয়াস মোল্লার তাল ফেলে সেলিম ভূঁইয়ার বিটে নাচ” Logo মিত্রদের ৪০ আসনে ছাড় দিতে পারে বিএনপি, চলছে দরকষাকষি Logo আরপিও সংশোধন পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে: ইসি সচিব Logo গলাচিপায় ‘ভিপি নুর নাকি হাসান মামুন’ বিতর্কে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত ১৫ Logo নিষিদ্ধ আ.লীগ ৪ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে: গোলাম মাওলা রনি Logo বিপাশার রাজনীতিতে নতুন খেলা Logo নতুন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই ব্যবসা চলবে না : ডাকসু ভিপি Logo বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ চারটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে: রনি

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নিজেদের অবস্থান সাফ জানিয়ে দিল ইরান

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:৩০:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ৪০ বার পড়া হয়েছে

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নিজেদের অবস্থান আরও একবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ঘোষণা দিয়েছেন, জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা এখন আর তেহরানের কাছে ‘প্রাসঙ্গিক নয়’।

রোববার (৫ অক্টোবর) তেহরানে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে আরাগচি বলেন, ‘কায়রোতে আইএইএর সঙ্গে আমাদের যে সহযোগিতা চুক্তি হয়েছিল, তা আর কোনো বাস্তব অর্থ বহন করে না।’ তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিল—পশ্চিমা বিশ্বের চাপ ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পর দেশটি এখন নতুন পথে হাঁটছে।

গত মাসে মিসরের রাজধানী কায়রোতে ইরান ও আইএইএর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। ওই চুক্তির আওতায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় পরিদর্শন ও নজরদারির একটি নতুন কাঠামো নির্ধারিত হয়। কিন্তু জুন মাসে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তেহরান ওই সহযোগিতা স্থগিত করে দেয়। এখন তারা কার্যত আইএইএর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘ ইরানের ওপর পুরনো নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহালের ঘোষণা দেয়। এই পদক্ষেপের নেতৃত্ব দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিন প্রধান দেশ—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে হওয়া ঐতিহাসিক ‘ইরান পারমাণবিক চুক্তি’তে এই তিন দেশও স্বাক্ষরকারী ছিল। এখন তারা ইরানের বিরুদ্ধে ‘চুক্তি ভঙ্গের’ অভিযোগ তুলে জাতিসংঘে নতুন নিষেধাজ্ঞার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে তেহরান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

ইউরোপীয় দেশগুলোর এই আচরণকে তীব্র সমালোচনা করে আরাগচি বলেন, ‘তারা ভেবেছিল নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়ে ইরানকে কোণঠাসা করবে। এখন তারা সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে এবং ফলাফলও দেখেছে—নিজেদের গুরুত্ব নিজেরাই কমিয়ে ফেলেছে।’ তার মতে, ভবিষ্যতে ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে এই তিন ইউরোপীয় দেশের ভূমিকা আগের তুলনায় অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ হবে।

ইরান আইএইএর বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে। তেহরানের মতে, পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি (এনপিটি)-এর অধীনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটি ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে কোনো নিন্দা জানায়নি, যা তার নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে।

আরও পড়ুন  ‘চীন জানে পরিণতি কী হবে’

যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে—ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। এই অভিযোগে সবসময়ই ইন্ধন জুগিয়েছে ইসরায়েল। তবে ইরান বারবার জানিয়েছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়—বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসা গবেষণার মতো বেসামরিক কাজে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হয়।

ইরানের সংসদে কয়েকজন সদস্য এনপিটি চুক্তি থেকে পুরোপুরি সরে আসার প্রস্তাব তুললেও, প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান স্পষ্ট করেছেন, ইরান এখনই ওই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার কথা ভাবছে না এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বজায় রাখবে।

বিশ্লেষকদের মতে, আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার এই ঘোষণা শুধু ইরানকেই নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন এক অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, এটি সংঘাতের ‘নতুন অধ্যায়’, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ট্যাগস :

জামায়াত এখন জিয়াউর রহমানের বিএনপির মতোই জনপ্রিয়: তাহের

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নিজেদের অবস্থান সাফ জানিয়ে দিল ইরান

আপডেট সময় : ০২:৩০:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নিজেদের অবস্থান আরও একবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ঘোষণা দিয়েছেন, জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা এখন আর তেহরানের কাছে ‘প্রাসঙ্গিক নয়’।

রোববার (৫ অক্টোবর) তেহরানে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে আরাগচি বলেন, ‘কায়রোতে আইএইএর সঙ্গে আমাদের যে সহযোগিতা চুক্তি হয়েছিল, তা আর কোনো বাস্তব অর্থ বহন করে না।’ তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিল—পশ্চিমা বিশ্বের চাপ ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পর দেশটি এখন নতুন পথে হাঁটছে।

গত মাসে মিসরের রাজধানী কায়রোতে ইরান ও আইএইএর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। ওই চুক্তির আওতায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় পরিদর্শন ও নজরদারির একটি নতুন কাঠামো নির্ধারিত হয়। কিন্তু জুন মাসে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তেহরান ওই সহযোগিতা স্থগিত করে দেয়। এখন তারা কার্যত আইএইএর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘ ইরানের ওপর পুরনো নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহালের ঘোষণা দেয়। এই পদক্ষেপের নেতৃত্ব দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিন প্রধান দেশ—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে হওয়া ঐতিহাসিক ‘ইরান পারমাণবিক চুক্তি’তে এই তিন দেশও স্বাক্ষরকারী ছিল। এখন তারা ইরানের বিরুদ্ধে ‘চুক্তি ভঙ্গের’ অভিযোগ তুলে জাতিসংঘে নতুন নিষেধাজ্ঞার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে তেহরান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

ইউরোপীয় দেশগুলোর এই আচরণকে তীব্র সমালোচনা করে আরাগচি বলেন, ‘তারা ভেবেছিল নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়ে ইরানকে কোণঠাসা করবে। এখন তারা সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে এবং ফলাফলও দেখেছে—নিজেদের গুরুত্ব নিজেরাই কমিয়ে ফেলেছে।’ তার মতে, ভবিষ্যতে ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে এই তিন ইউরোপীয় দেশের ভূমিকা আগের তুলনায় অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ হবে।

ইরান আইএইএর বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে। তেহরানের মতে, পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি (এনপিটি)-এর অধীনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটি ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে কোনো নিন্দা জানায়নি, যা তার নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে।

আরও পড়ুন  ‘চীন জানে পরিণতি কী হবে’

যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে—ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। এই অভিযোগে সবসময়ই ইন্ধন জুগিয়েছে ইসরায়েল। তবে ইরান বারবার জানিয়েছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়—বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসা গবেষণার মতো বেসামরিক কাজে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হয়।

ইরানের সংসদে কয়েকজন সদস্য এনপিটি চুক্তি থেকে পুরোপুরি সরে আসার প্রস্তাব তুললেও, প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান স্পষ্ট করেছেন, ইরান এখনই ওই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার কথা ভাবছে না এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বজায় রাখবে।

বিশ্লেষকদের মতে, আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার এই ঘোষণা শুধু ইরানকেই নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন এক অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, এটি সংঘাতের ‘নতুন অধ্যায়’, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।