
খুলনা প্রতিনিধি………
প্রশাসন অনিয়ম, ওএমএস ও মিলারদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, এবং শিক্ষা ও খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থায় দীর্ঘকালীন অনিয়মের ঘটনায় তানভীরের বিরুদ্ধে গুঞ্জন ও তদন্ত দাবি তীব্র হচ্ছে।খুলনা জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের ডিসি ফুড তানভীর হোসেনকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত অভিযোগ ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা, আদালতের আদেশ/নির্দেশ উপেক্ষা করা, ও এ সময় অসংখ্য অনিয়মমূলক আর্থিক লেনদেন।
সূত্রে জানা যায়, তানভীর গত দেড় মাসে খুলনার অভিজাত হোটেলগুলো—হোটেল সিটি ইন এবং হোটেল টাইগার গার্ডেনে অবস্থান করেছেন এবং ঢাকা-খুলনা-ঢাকা বিমান যাত্রা করেছেন। এ সময়ে তিনি হানগরীর ওএমএস ডিলারদের কাছ থেকে আটার ইনডেন্ট বাবদ প্রত্যেক ডিলারের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা এবং চালের ডিও বাবদ পাঁচশত টাকা করে আদায় করেছেন। মহানগর ইনচার্জ কাজী নাহিদ ৩১টি ওয়ার্ডে ৩১টি ওএমএস পয়েন্ট থেকে দৈনিক প্রায় ৬২ হাজার টাকা কালেকশন করেছেন।

অফিসের নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা হলেও, তানভীর প্রাত্যহিক অফিসে দেরিতে আসেন এবং গভীর রাত ১১টা পর্যন্ত অফিসে বসে থাকেন। এ সময়ে তিনি পরিবহন ঠিকাদার, শ্রমিক হ্যান্ডলিং ঠিকাদার, এবং ময়দাকল ও চালকল মিলারদের কাছ থেকে আর্থিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করেন।
পূর্বেও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল। টাঙ্গাইলে থাকাকালীন সময়ে ১১ কোটি টাকার অডিট আপত্তির কারণে তাকে বরগুনায় বদলি করা হয়। কিশোরগঞ্জের ডিসি ফুডের দায়িত্বে থাকাকালে ভৈরব এলএসডিতে বিপুলসংখ্যক খাদ্যশস্য ঘাটতি ধরা পড়েছিল। পরে তার নেতৃত্বে সিলগালা ভেঙে ঘাটতি পূরণ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। কক্সবাজারের ডিসি ফুড থাকাকালীনও তার বিরুদ্ধে অর্থ আদায়ের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে।
উপজেলার ধান মিলের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করে তিনি নিজের পছন্দের মিলারদের বেশি বরাদ্দ দিয়েছেন এবং অনৈতিকভাবে বিল প্রদান করেছেন। প্রতি ২০ টনের গাড়িতে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া শ্রম ও পরিবহন ঠিকাদারদের মেয়াদ বাড়ানোর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি করার অভিযোগও উঠে এসেছে। পুষ্টি মিলার ও পরিবহন ঠিকাদারদের কাছ থেকেও তিনি বিলের অতিরিক্ত ১০% ঘুষ গ্রহণ করেছেন।

ওএমএস ডিলারদের বিরুদ্ধে বিনা কারণে জরিমানা আরোপ এবং শহরের ওএমএস পয়েন্টগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পদে আসীন হয়ে তিনি প্রায় ১০ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন।
এই অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে মহানগর ওএমএস কমিটির ছাত্রপ্রতিনিধি ও মহানগর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক জিডির শিকার হয়েছেন। জিডির নম্বর ১৭৫৮, তারিখ ৩১/০৯/২০২৫।
খাদ্য অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থা এবং খাদ্য বিতরণের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি উত্থাপিত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের বিস্তৃত অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতি না রোধ করলে জেলা পর্যায়ের খাদ্য নিরাপত্তা এবং সরকারি তহবিলের ক্ষতি অব্যাহত থাকবে।


























