ঢাকা ০৪:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo সৌদি আরবে ডিজেল ট্যাংকার-বাস সংঘর্ষে ৪২ ওমরাহযাত্রী নি*হত: Logo গাজীপুরে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে বর্তমানে চলছে যানবাহন Logo জননিরাপত্তা রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে নরসিংদী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চেকপোস্ট বৃদ্ধি ও টহল কার্যক্রম জোরদার: অপরাধ দমনে বদ্ধপরিকর জেলা পুলিশ Logo বংশালে জুতার কারখানায় আগুন, দগ্ধ ৪ Logo টঙ্গীতে গ্রেনেড বিস্ফোরণ, ওসি বলছেন ‘পটকা Logo গাজীপুর টঙ্গীতে পেট্রোলবোমাসহ দুইজন আটক Logo নরসিংদীতে জেলা পুলিশের অভিযানে ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ জন গ্রেফতার! Logo গাজীপুরে চলন্ত অবস্থায় একটি যাত্রীবাহী বাসে হঠাৎ আগুন Logo খেলার মাঠের অভাবে মোবাইল আসক্তি বাড়ছে তরুণদের বেলাবো রহিমের কান্দি গ্রামের Logo নারীদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়নের চিন্তা করা ভুল

এইচএসসিতে পাশ ও জিপিএ ৫ কম কেন, যা বললেন শিক্ষা উপদেষ্টা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৭:২১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৯৮ বার পড়া হয়েছে

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) যারা ভালো ফল করেছে তাদের অভিনন্দন জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বলেছেন, ফলাফল মানে শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়; এটি পরিবার, আশা, পরিশ্রম এবং ভবিষ্যতের গল্প।

তিনি বলেন, আজকের দিনটি সহজ নয়—না আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য, না অভিভাবকদের জন্য, না শিক্ষা প্রশাসনের জন্য।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, যাদের ফল প্রত্যাশামতো হয়নি, আমি তাদের প্রতি সহানুভূতি জানাই। আমি জানি, হতাশা আছে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এই মুহূর্তও শেখার অংশ। তোমাদের পরিশ্রম কখনোই বৃথা যায় না।

এইচএসসি-২০২৫ এর ফল নিয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা। চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার পরীক্ষায় গড় পাশের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

এবার জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সেই হিসাবে এবার পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল অনেককে বিস্মিত করেছে।

পাসের হার এবং জিপিএ–৫ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কম এবং প্রশ্ন উঠেছে—কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এর উত্তর জটিল নয় বরং সহজ, কিন্তু অস্বস্তিকর। বাংলাদেশে শেখার সংকট শুরু হয় খুব শুরুর দিকেই। প্রাথমিক স্তর থেকেই শেখার ঘাটতি তৈরি হয় এবং সেই ঘাটতি বছরের পর বছর সঞ্চিত হয়। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাইনি।

তিনি আরও বলেন, আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছিল—পাশের হারই সাফল্যের প্রতীক, জিপিএ ৫–এর সংখ্যা ছিল তৃপ্তির মানদণ্ড।

ফল ‘ভালো’ দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। আজ আমি সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই।

আরও পড়ুন  মাদ্রাসায় অবৈধ কমিটি: নিয়োগ বাণিজ্য ও সম্পত্তি আত্মসাৎতের অভিযোগ

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, একজন দায়িত্বশীল উপদেষ্টা হিসেবে আমি চাই, শিক্ষা ব্যবস্থা আবার বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করুক। যে ফলাফল শিক্ষার্থীর শেখাকে সত্যিকারের মূল্যায়ন করে, সেটিই হোক আমাদের সাফল্যের মানদণ্ড।

চলতি বছরে এসএসসি ফলাফল প্রকাশের পর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যে উদ্বেগ উঠেছিল তা মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, আমি সব শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি—যেন ভবিষ্যৎ পরীক্ষায়, বিশেষ করে এইচএসসি মূল্যায়নে, সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্বোচ্চ ন্যায্যতা বজায় রাখা হয়, কিন্তু একই সঙ্গে যেন ফলাফলের বাস্তবতা বিকৃত না হয়। আমরা ‘অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি’ নয় বরং ‘ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা’কে বেছে নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত সহজ নয়, কিন্তু প্রয়োজনীয়।

কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, আজ যদি সাহস করে বাস্তবতা স্বীকার না করি তাহলে মেধাবীদের প্রতি এবং আগামী প্রজন্মের প্রতি আমরা অন্যায় করব।

দায়িত্ব ও আত্মসমালোচনা

শিক্ষা মন্ত্রণালয় হিসেবে আমরা কোনোভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারি না। এবং এই মন্ত্রণালয়ের কর্ণধার হিসেবে আমার প্রথম দায়িত্ব হলো নিজেকে এবং আমাদের পুরো ব্যবস্থাকে মূল্যায়নের আওতায় আনা। এই ফলকে আমি ব্যর্থতা নয়, বরং আত্মসমালোচনার সুযোগ হিসেবে দেখছি। আমরা এখন এমন এক সময়ে আছি, যেখানে নিজেদের, শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একত্রে শেখার ভবিষ্যৎ নিয়ে সততার সঙ্গে কথা বলার সময় এসেছে।

স্ব-মূল্যায়ন ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডকে তাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার একটি স্বতন্ত্র পর্যালোচনা রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, আমরা শিক্ষাবিদ, গবেষক, ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করছি—যারা ডেটা বিশ্লেষণ করে শেখার মূল ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করবেন। আমাদের উদ্দেশ্য, অভিযোগ নয়, সমাধান খোঁজা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

সৌদি আরবে ডিজেল ট্যাংকার-বাস সংঘর্ষে ৪২ ওমরাহযাত্রী নি*হত:

এইচএসসিতে পাশ ও জিপিএ ৫ কম কেন, যা বললেন শিক্ষা উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ০৭:২১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) যারা ভালো ফল করেছে তাদের অভিনন্দন জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বলেছেন, ফলাফল মানে শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়; এটি পরিবার, আশা, পরিশ্রম এবং ভবিষ্যতের গল্প।

তিনি বলেন, আজকের দিনটি সহজ নয়—না আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য, না অভিভাবকদের জন্য, না শিক্ষা প্রশাসনের জন্য।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, যাদের ফল প্রত্যাশামতো হয়নি, আমি তাদের প্রতি সহানুভূতি জানাই। আমি জানি, হতাশা আছে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এই মুহূর্তও শেখার অংশ। তোমাদের পরিশ্রম কখনোই বৃথা যায় না।

এইচএসসি-২০২৫ এর ফল নিয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা। চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার পরীক্ষায় গড় পাশের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

এবার জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সেই হিসাবে এবার পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল অনেককে বিস্মিত করেছে।

পাসের হার এবং জিপিএ–৫ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কম এবং প্রশ্ন উঠেছে—কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এর উত্তর জটিল নয় বরং সহজ, কিন্তু অস্বস্তিকর। বাংলাদেশে শেখার সংকট শুরু হয় খুব শুরুর দিকেই। প্রাথমিক স্তর থেকেই শেখার ঘাটতি তৈরি হয় এবং সেই ঘাটতি বছরের পর বছর সঞ্চিত হয়। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাইনি।

তিনি আরও বলেন, আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছিল—পাশের হারই সাফল্যের প্রতীক, জিপিএ ৫–এর সংখ্যা ছিল তৃপ্তির মানদণ্ড।

ফল ‘ভালো’ দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। আজ আমি সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই।

আরও পড়ুন  শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বড় সুখবর

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, একজন দায়িত্বশীল উপদেষ্টা হিসেবে আমি চাই, শিক্ষা ব্যবস্থা আবার বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করুক। যে ফলাফল শিক্ষার্থীর শেখাকে সত্যিকারের মূল্যায়ন করে, সেটিই হোক আমাদের সাফল্যের মানদণ্ড।

চলতি বছরে এসএসসি ফলাফল প্রকাশের পর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যে উদ্বেগ উঠেছিল তা মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, আমি সব শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি—যেন ভবিষ্যৎ পরীক্ষায়, বিশেষ করে এইচএসসি মূল্যায়নে, সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্বোচ্চ ন্যায্যতা বজায় রাখা হয়, কিন্তু একই সঙ্গে যেন ফলাফলের বাস্তবতা বিকৃত না হয়। আমরা ‘অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি’ নয় বরং ‘ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা’কে বেছে নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত সহজ নয়, কিন্তু প্রয়োজনীয়।

কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, আজ যদি সাহস করে বাস্তবতা স্বীকার না করি তাহলে মেধাবীদের প্রতি এবং আগামী প্রজন্মের প্রতি আমরা অন্যায় করব।

দায়িত্ব ও আত্মসমালোচনা

শিক্ষা মন্ত্রণালয় হিসেবে আমরা কোনোভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারি না। এবং এই মন্ত্রণালয়ের কর্ণধার হিসেবে আমার প্রথম দায়িত্ব হলো নিজেকে এবং আমাদের পুরো ব্যবস্থাকে মূল্যায়নের আওতায় আনা। এই ফলকে আমি ব্যর্থতা নয়, বরং আত্মসমালোচনার সুযোগ হিসেবে দেখছি। আমরা এখন এমন এক সময়ে আছি, যেখানে নিজেদের, শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একত্রে শেখার ভবিষ্যৎ নিয়ে সততার সঙ্গে কথা বলার সময় এসেছে।

স্ব-মূল্যায়ন ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডকে তাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার একটি স্বতন্ত্র পর্যালোচনা রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, আমরা শিক্ষাবিদ, গবেষক, ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করছি—যারা ডেটা বিশ্লেষণ করে শেখার মূল ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করবেন। আমাদের উদ্দেশ্য, অভিযোগ নয়, সমাধান খোঁজা।